জুলাই গণহত্যা মামলার পলাতক আসামি ও আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী শাহজাহান চৌধুরীর ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ মিলেছে, সুবিধা পাওয়ার যোগ্য না হয়েও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পলাতক আসামি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবিএম নাজমুল কাদির শাহজাহান চৌধুরীর মালিকানাধীন আফাকু কোল্ড স্টোরেজ, যা ইসলামী ব্যাংক বগুড়া বড়গোলা শাখার অর্থায়নে নির্মিত হয়। সেই ঋণের বর্তমান স্থিতি প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। ঋণটি এখন খেলাপি মানে শ্রেণিকৃত।
এই ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর শাহজাহান চৌধুরী বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তার আলোকে (সূত্র: বিআরপিডি, ডিভিশন-১/সিআরএস/৯০২(৪)/২০২৫-১২৩৪৯. ২৩/১০/২০২৫) ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে আবেদন করেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি অনুমোদন করে। পরে ইসলামী ব্যাংকে অনুমোদনের কপিটি পাঠানো হয়।
নথি অনুযায়ী, আফাকু কোল্ড স্টোরেজের মালিক নাজমুল কাদির শাহজাহান চৌধুরী ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে সরাসরি ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আবেদন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ অক্টোবর ঋণ পুনঃতফসিল করার করার জন্য ‘ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ আদায় ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি সমস্যাগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু ও লাভজনক পর্যায়ে উন্নীতকরণে সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটির ৩৪তম সভায় তা পুনর্গঠনে অনুমোদন করে। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংককে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চিঠি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, নীতি সহায়তা পাওয়ার যোগ্যতার শর্ত অনুযায়ী ৩০০ কোটি টাকার নিচের ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হয়। আবেদনকারী আগে চারবার এ ধরনের সুবিধা নিয়ে থাকলে নতুন করে এই সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। একই গ্রাহক একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকলে সর্বোচ্চ ঋণ দেওয়া ব্যাংকের মাধ্যমে পুনর্গঠনের আবেদন করতে হয়। কিন্তু নাজমুল কাদির শাহজাহান চৌধুরী এসব শর্ত উপেক্ষা করে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেন।
এ ধরনের বিশেষ সুবিধা নিতে গ্রাহককে নিজে আবেদন করার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে শর্তের ব্যত্যয় হয়েছে। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী (স্মারক সংখ্যা এসবি/এফআই/২০২৫/৭৭০(৩). ০৯/১০/২০২৫) নাজমুল কাদের শাহজাহান চৌধুরী ও তার স্ত্রী ইসমত আরা লাইজু গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর ১৯ সেপ্টেম্বর দেশ থেকে পালিয়ে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানা ও শিবগঞ্জ থানায় মোট ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে।
একজন পলাতক আসামিকে নীতি অনুসরণ না করে নীতি সহায়তা দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, নীতি সহায়তার মতো বিশেষ সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালক উপস্থিত না থেকে আবেদন করে এই সুবিধা পান!
বিষয়টি নিয়ে ইসলামী ব্যাংক বড়গোলা শাখার ম্যানেজার তৌহিদ রেজার সঙ্গে ফোনকলে কথা বললে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ খান বাংলানিউজকে বলেন, যেসব ক্ষেত্রে পলিসি কাভার করে না, এমন কেস এলে বাণিজ্যিক ব্যাংক কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেই। আবদেনকারী সম্ভাবনাময় হলে তার ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানোর মতো মনে হলে নীতিতে কাভার না করলেও কমিটি সুবিধা নেই। তবে চারবার পুনঃতফসিল নিয়ে থাকলে বা অন্য আরও কোনো ব্যত্যয় থাকলে এ সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংক বগুড়া বড়গোলা শাখার এই ঋণটি পুনঃতফসিলের জন্য ডাকযোগে, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারে আবেদন এনে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সপ্তমবারের মতো পুনঃতফসিল করার চেষ্টা করছে। অথচ বিদেশে পলাতক কোনো আসামির কোনো স্বাক্ষরকৃত আবেদন বা কোম্পানির রেজুলেশন ব্যাংক বা কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করতে পারে না।