নতুন চাকরির প্রস্তাব হাতে পেয়ে উত্তেজনা স্বাভাবিক। ফোনে ‘জব অফার’ নোটিফিকেশন দেখলেই মন উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে। কিন্তু ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, আবেগে ভেসে সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলে পরবর্তী সময় হতাশা, কাজে অসন্তুষ্টি বা ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে। নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ১০টি বিষয় খুঁটিয়ে ভাবা জরুরি।
প্রথম যে বিষয়টি আসে, তা হলো বেতন। মাসিক, সাপ্তাহিক বা ঘণ্টাভিত্তিক হিসাব, বেতনের ক্ষেত্রে সবকিছুই বিবেচনা করা প্রয়োজন। বেতন কি আপনার প্রত্যাশার সঙ্গে মেলে, কর কাটার পর হাতে কত টাকা পাবেন এবং স্থানীয় জীবনযাত্রার খরচ মেটানো যাবে কি—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখুন। শুধু মূল বেতন নয়, বোনাস, কমিশন এবং পারফরম্যান্স ইনসেনটিভও মূল্যায়ন করুন।
বেতন গুরুত্বপূর্ণ হলেও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যেমন স্বাস্থ্যবিমা, পেনশন, ছুটি, শিশু যত্ন সহায়তা বা প্রতিষ্ঠানে খাবারের সুবিধা—সবকিছুই বিবেচনা করতে হবে। কখনো কখনো এই সুবিধাগুলো মূল বেতনের চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।
দৈনিক যাতায়াতের সময় কত লাগবে, তা হিসাব করা জরুরি। দীর্ঘ যাতায়াত শুধু ক্লান্তি নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ, পরিবারের সঙ্গে কম সময়—এসব সমস্যা এড়াতে অফিসের অবস্থান ও যাতায়াতের সুবিধা বিবেচনা করুন।
নতুন চাকরি মানেই নতুন রুটিন। আপনার ব্যক্তিগত জীবন ও কাজের ভারসাম্য কেমন হবে, সেটি মূল্যায়ন করুন। ফ্লেক্সিবল সময়, রিমোট বা হাইব্রিড কাজের সুযোগ, স্বায়ত্তশাসন—এসব বিষয় আপনার সন্তুষ্টি নির্ধারণ করবে।
একটি চাকরি শুধু বেতন নয়, ভবিষ্যতের পথও হয়। চাকরির সময় জানতে হবে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পদোন্নতির ইতিহাস কেমন, প্রশিক্ষণ বা মেন্টরশিপের সুযোগ আছে কি না এবং এই পদের জন্য সম্ভাব্য ক্যারিয়ার গতিপথ কেমন।
চাকরির নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য ও সুনামের ওপর নির্ভর করে। পরিচিতজনদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কর্মপরিবেশ পরিবেশ সম্পর্কে জানুন।
নতুন পদের দায়িত্বগুলো কেমন, তা বোঝা খুব জরুরি। দৈনিক রুটিন, অতিরিক্ত দায়িত্ব, ওভারটাইম ও ভ্রমণের প্রয়োজন—সবকিছু যাচাই করুন। শুধু পদবি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
আপনার সহকর্মী ও সুপারভাইজারের সঙ্গে মিল-অমিল, নেতৃত্বের শৈলী ও দলের গতিবিধি—সবই কাজের সন্তুষ্টিকে প্রভাবিত করে। সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে প্রশ্ন করুন বা আগের কর্মীর অভিজ্ঞতা জানুন।
প্রতিষ্ঠানের মিশন, ভিশন, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি আপনার ব্যক্তিগত মানের সঙ্গে মিলছে কি না, তা দেখুন। বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি, সহায়তামূলক পরিবেশ—কর্মক্ষেত্রে এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।
কোনো চাকরিই শতভাগ নিরাপদ নয়, তবে কিছু শিল্প ও পেশা অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল। চাকরি গ্রহণের আগে প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা যাচাই করা জরুরি।
নতুন চাকরির প্রস্তাব পাওয়া মাত্রই তাৎক্ষণিক ভালো লাগা থেকে অনেকেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আবেগে ভেসে সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলে দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। সঠিক বেতন, সুবিধা, যাতায়াত, কাজের প্রকৃতি, কোম্পানির সুনাম—এসব যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিলে চাকরি গ্রহণ ফলপ্রসূ হবে। তাই তাড়াহুড়া না করে, এই ১০ বিষয় খুঁটিয়ে ভাবার পরই সিদ্ধান্ত নিন। তথ্যসূত্র: ফোর্বস, সিএনবিসি, বিজনেস ইনসাইডার