জ্বালানি অবরোধে বিপর্যস্ত মালি, দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ

জ্বালানি অবরোধে বিপর্যস্ত মালি, দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ

সশস্ত্র গোষ্ঠীর আরোপিত জ্বালানি অবরোধে নাকাল পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি। পুরো দেশব্যাপী বিপর্যস্ত এ পরিস্থিতির মুখে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সামরিক সরকার।

রোববার (২৬ অক্টোবর) দেশটির শিক্ষামন্ত্রী আমাদু সি সাভানে এক ঘোষণায় জানান, আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জ্বালানি সরবরাহে বাধার কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার স্বাভাবিক জ্বালানি সরবরাহ পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, যাতে ১০ নভেম্বর থেকে আবারও ক্লাস শুরু করা যায়।

এদিকে, মালির সংকট ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এক পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জ্বালানি সরবরাহে বিধিনিষেধ থাকবে। এ সময় জরুরি সেবা, ত্রাণ কার্যক্রম ও গণপরিবহনের যানবাহনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে নির্দিষ্ট ফিলিং স্টেশনে।

দুই মাস ধরে জিহাদি গোষ্ঠীর অবরোধ
প্রায় দুই মাস আগে জামাত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম) নামে একটি সশস্ত্র জিহাদি গোষ্ঠী মালিতে জ্বালানি আমদানির ওপর অবরোধ ঘোষণা করে। সাহেল অঞ্চলে সক্রিয় আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট এই সংগঠনটি প্রতিবেশী সেনেগাল ও আইভরি কোস্ট হয়ে আসা জ্বালানি বহনকারী ট্যাঙ্কারগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে।

জেএনআইএম বলছে, মালি কর্তৃপক্ষ গ্রামীণ অঞ্চলে জেরিক্যান বা ছোট পাত্রে জ্বালানি বিক্রির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেটির প্রতিশোধ হিসেবেই তারা এই অবরোধ দিয়েছে। অপরদিকে সরকার দাবি করছে, গ্রামীণ এলাকাগুলোর জ্বালানি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সরবরাহ লাইন বন্ধ করা।

অর্থনীতি ও দৈনন্দিন জীবনে বিপর্যয়
এই জ্বালানি অবরোধে মালির নাজুক অর্থনীতি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবহন ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাজধানী বামাকোয় দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে জ্বালানি স্টেশনগুলোর সামনে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকেই পেট্রল পাচ্ছেন না।

প্রতিবেশী বুরকিনা ফাসো ও নাইজারসহ মালি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জঙ্গিগোষ্ঠী ও স্থানীয় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এসব দেশে পরপর সামরিক অভ্যুত্থানের পর নতুন শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় আসে।

তবে ফরাসি সেনাদের বহিষ্কার করে রুশ ভাড়াটে বাহিনীর সহায়তা নেওয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাদের মতে, জ্বালানি অবরোধটি মালির সামরিক সরকারের জন্য বড় ধাক্কা। কারণ ২০২০ সালে ক্ষমতা দখলের পর তারা দাবি করেছিল, দেশের দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা সংকট সমাধানেই তাদের এই পদক্ষেপ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তাদের সেই অঙ্গীকারের বিপরীত চিত্র তুলে ধরছে।

সূত্র: আল জাজিরা, এএফপি

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS