এক প্রহর পরেই লাখো বাঙালির রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে মুক্তির স্বাদ পায় এই জাতি। মানচিত্রে জায়গা দখল করে নেয় স্বাধীন লাল-সবুজের বাংলাদেশ। আর যাদের আত্মত্যাগে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে বাঙালি, তাদের এই দিনে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে গোটা জাতি। তাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে প্রতিবারের মতো সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধকে সাজানো হয়েছে বাহারি সাজে। ধুয়ে-মুছে করা হয়েছে পরিপাটি। পুরো সৌধ প্রাঙ্গণে রোপণ করা হয়েছে লাল-নীল-হলুদ ফুলগাছ। পুরো সৌধ এলাকায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাসহ বিদেশি কূটনৈতিকরা। শ্রদ্ধা নিবেদনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও অনুশীলন করছেন শেষ মুহূর্তের কুচকাওয়াজ।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে পুরো সৌধ এলাকা সাজানো হয়েছে বাহারি রঙে। চিত্রকর্মীর নিপুণ তুলির আঁচড়ে বিজয়ের রূপ নিয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সাভার গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রায় মাস ধরে গাছপালা কেটে-ছেঁটে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পুরো সৌধ প্রাঙ্গণের লাল ইটের স্থাপনা ধুয়ে-মুছে পরিপাটি করে তুলেছেন এক দল পরিচ্ছন্নকর্মী।
পুরো সৌধ এলাকায় লাল-নীল ও হলুদসহ নানা রঙের ফুল গাছের সহস্রাধিক চারার মাধ্যমে বিজয়ের সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। এসব প্রস্তুতি দেখে মনে হয় শ্রদ্ধা গ্রহণে বুক পেতে আছে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা।
স্মৃতিসৌধের পরিচ্ছন্নকর্মী মো. শহিদুল বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আমরা প্রায় মাসব্যাপী জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছি। স্মৃতিসৌধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজসহ বিভিন্ন কাজ করে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে। রাতের স্মৃতিসৌধে ভিন্ন রূপ আনতে লাল-নীল আলোকবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। আমিসহ আরও অনেক শ্রমিক দলে দলে বিভক্ত হয়ে আমরা স্মৃতিসৌধে কাজ করেছি। প্রতিবছরই আমরা এই কাজ করে থাকি। এই কাজ করকে পেরে আমরা গর্বিত।
পরিচ্ছন্নকর্মী হালিমা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিবছর দুই দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ধোয়া-মোছার কাজ করে থাকি। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তাদের কবর ও স্মৃতির স্তম্ভ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। আমি বাকি জীবনে এই শহীদদের কবর যেন পরিষ্কার করতে পারি, তাদের জন্য কাজ করতে পারি এটাই চাই। তাহলে জীবনকে স্বার্থক মনে করবো। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, সে সময় হয়তো আমি থাকলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি, কিন্তু এই যুদ্ধে আত্মত্যাগীদের জন্য কাজ করতে পেরেছি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করার জন্য ১৬ মার্চ থেকে স্মৃতিসৌধে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও বিদেশি কূটনৈতিকরা শ্রদ্ধা জানানোর পর সবার জন্য স্মৃতিসৌধের ফটক উন্মুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে সৌধ প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আলোকসজ্জা ও সিসিটিভি স্থাপনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন) সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গাজীপুরসহ আশপাশের ১৮ জেলার কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছেন। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিটের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ১২টি ইউনিট হয়ে পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার কাজ করবেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন ট্রাফিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার কোনো হুমকি না থাকলেও বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা রোধে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।