রোজাকে কেন্দ্র করে কলকাতায় ফলের বাজারে ব্যস্ততা তুঙ্গে

রোজাকে কেন্দ্র করে কলকাতায় ফলের বাজারে ব্যস্ততা তুঙ্গে

নামাজ, ইবাদতের মধ্য দিয়েই কয়েকদিন আগেই পালিত হয়েছে শবে বরাত। এবার শুরু হচ্ছে রমজান মাস।শনিবার (১ মার্চ) রাত থেকেই শুরু হয়ে যাবে তারাবির নামাজ। রোববার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু। এরই মধ্যে রোজার দিনগুলোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়। আর রমজানের অন্যতম আকর্ষণ ইফতার। দিনভর সিয়াম সাধনার পর ইফতারে ফলের গুরুত্ব বিশ্বজুড়ে। তাই প্রতিদিনের ইফতারে ফলের জোগান দিতে কলকাতায় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে জোরকদমে প্রস্তুতি।  

ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে একাধিক জাতের খেজুর এবং বিভিন্ন ফল সরবরাহ শুরু হয়ে গেছে কলকাতার সবচেয়ে বড় পাইকারি ফলের বাজার মেছুয়া ফলপট্টিতে। পাইকারি ফলের আড়তে আসতে শুরু করে দিয়েছে ভিন রাজ্যগুলোর ফল। সবমিলিয়ে গোটা মাসজুড়ে রমজান উপলক্ষে ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে কলকাতা এবং হাওড়া সংলগ্ন মেছুয়া পাইকারি ফল বাজারের পাশাপাশি শিয়ালদহ রেল স্টেশন লাগোয়া পাইকারি ফল বাজারেও। এদিন মেছুয়া এবং শিয়ালদহের পাইকারি ফল বাজার ঘুরে এমনই চিত্র সামনে এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম ফলবাজার মেছুয়ার পাশাপাশি শিয়ালদহ পাইকারি ফল বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, রাত পোহালেই রমজান মাস। তাই এসময় চাহিদা অনুযায়ী ফলের জোগান দিতে ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছে ফল বিক্রেতাদের। তাদের অভিমত, কলকাতায় এই মাসব্যাপী যে ফল বিক্রি হয়, তা বছরে অন্য কোনো সময় হয় না।

একইভাবে শহরের নিউমার্কেটের খেজুর এবং অন্যান্য ড্রাই ফ্রুট আড়তদার ইউসুফ জানান, রমজান উপলক্ষে আকাশচুম্বী চাহিদা থাকে ড্রাই ফ্রুটেরও। এতটা চাহিদা বছরের কোনো সময় থাকে না। তবে বছরের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের মধ্যে বড়দিনেও ড্রাই ফ্রুটের চাহিদা বেশি থাকে। সেসব ড্রাই ফ্রুট ব্যবহার কেক তৈরিতে।

খুচরা বাজারে কাজু কেজি প্রতি ৯০০ থেকে হাজার রুপির মধ্যে। কিশমিশ মান অনুযায়ী, এক কেজি ৩৫০-৪০০ রুপি। আমন্ড বাদাম ৮০০ রুপি। পেস্তা এবং আখরোট ১২০০ – ১৪০০ রুপির মধ্যে।  

ইউসুফ জানান, ড্রাই ফ্রুটের পাশাপাশি এবার চিয়াসিডের চাহিদাও বেশি। ইফতারির সরঞ্জামে অন্যতম হলো শরবত। মাসজুড়ে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শরবতের জন্য অনেকেই পছন্দ করছে চিয়াসিড। কেউ লেবু পানির শরবতে সঙ্গে পান করেন, অনেকে রূহ-আফজার সঙ্গে। সেই চিয়াসিড এক কেজির দাম পড়ছে ৪০০-৪৫০ রুপি।

নিউমার্কেটের পাশাপাশি কলকাতার বড় বাজারে খেজুর, আনজিরসহ অন্যান্য শুকনো ফলের আমদানি এবং মজুত ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। মহারাষ্ট্র নাসিকসহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জেলাগুলো থেকে ড্রাই ফ্রুট আসতে শুরু করে দিয়েছে। এমনকি ভিনরাজ্য থেকে আনারস, আপেল, মালটা, ড্রাগন, মুসম্বি, নাসপাতিসহ বিদেশি ফলগুলোও আসা শুরু হয়ে গেছে।

শিয়ালদহ পাইকারি ফলের বাজারের ব্যবসায়ী হায়দার আলি জানান, রমজান মাসে ইফতারির সময় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় খেজুর। রমজান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে খেজুরের আমদানি শুরু হয়ে গেছে। আজওয়া, আম্বান, মেডজুল, হাবিবি খেজুর ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর খেজুরও কলকাতার বিভিন্ন পাইকারি ফল বাজারে আমদানি শুরু হয়েছে। ভালো মানের খেজুর খুচরা বাজারে বর্তমানে এককেজির দাম পড়ছে ৭০০ – ৮০০ রুপি।

মেছুয়া বাজারের খেজুর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সিরাজ জানিয়েছেন, সারা বছরে আয়ের জন্য আমরা রমজানের ওপর ভরসা করে থাকি। এ বছরটাও বাজার ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে খেজুরের দাম একই থাকবে। খেজুরের মান অনুযায়ী, কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে এক হাজার রুপি মধ্যে। এছাড়া ট্যাটকো খেজুর ৩০০-৩৫০ রুপি, নূরী ২৮০-৩০০ রুপি, মাবরুম খেজুর ৪০০ রুপি, কলমি ৬৫০ রুপি, হিলি ২৯০ রুপি, কিমিয়া ৩০০ রুপি এবং আলু খেজুর ১১০ রুপির মধ্যে। সবচেয়ে কমদাম চট খেজুরের। যার দাম পড়ছে ৮০- ৯০ রুপি প্রতি কেজি।

অপরদিকে খুরশিদ আলম, গোপাল দাস প্রমুখ ছোট ফল ব্যবসায়ী জানান, রামজান মাসেই ফলের চাহিদা সর্বাধিক থাকে। এবার অনুকূল আবহাওয়া থাকায় পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভিনরাজ্যেও বিভিন্ন মৌসুমি ফলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, গোটা রমজান মাসে ফলের দাম নাগালের মধ্যেই থাকবে।

বর্তমানে মান অনুযায়ী, কেজি প্রতি আপেল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ রুপিতে। আঙুরের কেজি প্রতি দাম ১০০-১২০ রুপি, নাসিকের উন্নত জাতের বেদানা বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১২০-১৪০ রুপি। কেজি প্রতি পাকা পেঁপের বর্তমান দাম ৪৫-৫০ রুপি, সাইজ এবং মান অনুযায়ী কলার ডজন ৫০ থেকে ৭০ রুপি। বড় সাইজের পাকা বেলের দাম ৩০-৩৫ রুপি, বড় সাইজের প্রতি পিস আনারসের দাম ৬০ -৭০ রুপির আশপাশে। নারিকেল প্রতি পিস ২৫-৪০ রুপি।

ইফতারের শসার কদর বেশি। ৩০-৪০ রুপি কেজিদরে শসা এখনই বিকোচ্ছে। তবে শশার দাম বাড়বে। মাঝারি সাইজের মুসাম্বি লেবুর একপিসের দাম পৌঁছেছে ১০- ২০ রুপি। একপিস শরবত খাওয়ার লেবুর দাম পড়ছে ৫ রুপি। তবে অন্যান্য ফলের তুলনায় কলকাতা বাজারে বর্তমানে সস্তা দামে বিকোচ্ছে তরমুজ। প্রতি কেজি ৩০ রুপি। পাশাপাশি দক্ষিণ ভারত থেকে আসা তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ রুপি।

তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি সময় সফেদা ও পেয়ারার দাম অনেকটাই বেশি তা স্বীকার করে নিচ্ছেন ফল ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারেই পেয়ারার দাম ঘোরাফেরা করছে ১১০-১২০ রুপির মধ্যে। চড়া দাম সফেদারও। পাইকারি বাজারেই একশ সবেদার দাম ৯০০ রুপির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে বলেও জানান ফল ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে ফল ব্যবসায়ীদের ধারণা, গোটা রমজান মাসজুড়ে এমনই ফলের দাম থাকবে কলকাতা। তবে শহরের নিরিখে ১০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ফল কেনা যায়। ফলে এ বছরও রোজাদারদের দাম নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS