যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি সিগারেট গড়ে মানুষের জীবনের ২০ মিনিট কমিয়ে দেয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকদের মতে, পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ১৭ মিনিট এবং নারীদের জন্য ২২ মিনিট। অর্থাৎ যদি কেউ দিনে ২০টি সিগারেটের একটি প্যাকেট ধূমপান করেন, তবে এটি তার জীবন থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭ ঘণ্টা কমিয়ে দেয়।
সিএনএন এর প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে, যারা আজীবন ধূমপান করেন, তাদের জীবন গড়ে ১০ বছর কমে যায়। যুক্তরাষ্ট্রেও ধূমপায়ীদের গড় আয়ু ধূমপান না করা মানুষের তুলনায় অন্তত ১০ বছর কম বলে জানিয়েছে মার্কিন সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন।
ধূমপানের ক্ষতি মূলত ধীরে ধীরে জমা হয়। তবে সময়মতো ধূমপান ছেড়ে দিলে কিছুটা জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, যারা ২০ বা ৩০-এর দশকের শুরুর দিকে ধূমপান ছেড়ে দেন, তাদের আয়ু প্রায় ধূমপান না করা মানুষের মতোই থাকে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে।
গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ১ জানুয়ারি ধূমপান ছেড়ে দিলে, যারা দিনে ১০টি সিগারেট খান তারা ৮ জানুয়ারির মধ্যে একদিনের আয়ু বাঁচাতে পারেন। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এক সপ্তাহের আয়ু এবং ৫ আগস্টের মধ্যে এক মাসের আয়ু রক্ষা করা সম্ভব। বছরের শেষে, তারা প্রায় ৫০ দিন আয়ু হারানো থেকে বাঁচতে পারেন।
গবেষণার প্রধান লেখক ডা. সারা জ্যাকসন বলেছেন, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ। যত দ্রুত ছাড়বেন, তত দীর্ঘ সময় বাঁচতে পারবেন।
ধূমপান শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল করে তোলে। ২০২৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান শরীরের সংক্রমণ, ক্যান্সার এবং অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান বন্ধ করার পর প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা উন্নতি করলেও, পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে কয়েক বছর লেগে যায়।
গবেষক ডা. ড্যারাগ ডাফি বলেছেন, ভালো খবর হলো, ধূমপান বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে শরীর পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটি কখনোই ধূমপান শুরু করার সঠিক সময় নয়। তবে আপনি যদি ধূমপায়ী হন, আজই তা ছাড়ার সেরা সময়।
যদিও ধূমপানের হার ধীরে ধীরে কমছে, এটি এখনও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান কারণ। প্রতি বছর ধূমপানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ৪,৮০,০০০-এর বেশি মানুষ মারা যায়।
তবে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া মাত্র ৪০ বছর বয়সের আগে করলে, ধূমপানের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি ৯০% পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। সুতরাং, আপনার জীবনের গুণগত মান ও দীর্ঘায়ু বাড়াতে ধূমপান ছাড়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।