বাংলাদেশে রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নগর মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দলের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সময় রোববার (২২ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে আসার পর টিউলিপ সিদ্দিককে গত বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন টিউলিপ। তবে টিউলিপ নিজে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। খবরটি সামনে আসে রোববার।
যুক্তরাজ্যের নগর বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও বোন শেখ রেহানার পাশাপাশি টিউলিপের বিরুদ্ধেও তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মেইল অন সানডে জানিয়েছে, পাঁচজন তদন্তকারী টিউলিপ সিদ্দিক এবং অন্যদের সম্পর্কে ‘প্রমাণপত্র’ সংগ্রহ করছেন এবং তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাছে চিঠি লেখার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পত্রিকাটিতে বলা হয়েছে যে, দুদক ঢাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে মিসেস সিদ্দিকের কাছে চিঠি পাঠাবে। উত্তর পাওয়ার পর তদন্তকারীরা প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদন জারি করা উচিত কিনা তা বিবেচনা করবেন।
দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে আমরা সকলের কাছে চিঠি পাঠাব। টিউলিপ সিদ্দিককে জবাব দেওয়ার জন্য ডাকা হবে। ’
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেছেন যে, চিঠিগুলি টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ’ দেবে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার দাবি অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
উল্লেখ্য, টিউলিপ ব্রিটেনের লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য। তিনি ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার খালা, শেখ রেহানার মেয়ে তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, রাশিয়ার সঙ্গে ২০১৩ সালে যখন রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হয়, তখন এতে মধ্যস্থতা করেন টিউলিপ। যদিও ওই সময় তিনি ব্রিটেনের কোনো সরকারি দায়িত্বে ছিলেন না।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে টিউলিপ সিদ্দিক। একটি অনুষ্ঠানে টিউলিপ সিদ্দিককে তার খালা শেখ হাসিনা এবং ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল ছবি তুলতে দেখা গিয়েছিল। তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
ভিডিওর বিষয়ে আগে টিউলিপ দাবি করেছিলেন, এটি ছিল শুধুই একটি ‘পারিবারিক’ অনুষ্ঠান।
সূত্র জানায়, সেই ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে টিউলিপ জানান, তিনি এক দশকেরও বেশি সময় আগে তার খালার সঙ্গে দেখা করতে মস্কো গিয়েছিলেন। কারণ বাংলাদেশের চেয়ে রাশিয়ায় যাওয়া তার জন্য সহজ ছিল।
মূলত টিউলিপ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে অভিযোগটি আনেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
তিনি অভিযোগ করেন, টিউলিপ সিদ্দিক ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে মধ্যস্থতা এবং বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকের সমন্বয় করেছেন।
নথিতে অভিযোগ করা হয়েছে, চুক্তিতে এই প্রকল্পের ব্যয় ১ বিলিয়ন পাউন্ড বাড়ানো হয়েছে, যার ৩০ শতাংশ অর্থ টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
ববি হাজ্জাজের অভিযোগ, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য ও মন্ত্রীরা এই প্রকল্প থেকে মোট ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার (৫৯ হাজার কোটি টাকা) সরিয়েছেন।
এমন অভিযোগের পর টিউলিপ পদত্যাগ করবেন কি না বা তার বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের রায় কী – প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিউলিপের ওপর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আস্থা আছে এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপগুলোর দেখভালের করার ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব অব্যাহত থাকবে। তিনি তার মন্ত্রীর দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন।
তথ্যসূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ