মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারবে এমন বিধানসহ ২০টি সংশোধনী এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বুধবার (২০ নভেম্বর) সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে খসড়া অধ্যাদেশের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, কিছু কিছু অপরাধের স্থল ঠিক করা ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এখন বাংলাদেশের বাইরেও যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আমলযোগ্য কোনো অপরাধ সংগঠিত হয় সেগুলোও নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে বিবেচনায় নেওয়া যাবে।
একটি বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে- পাবলিক হিয়ারিং হবে কিনা। অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ ছবি নিতে চান, কোর্ট প্রসিডিংয়ের ভিডিও-অডিওগুলো রেকর্ড করতে চান। আমরা মডার্ন হয়েছি, প্রগ্রেসিভ হয়েছি, আলাপ-আলোচনা হয়েছে যে, কোর্টের ডিসকাশনে ছেড়ে দিতে পারি। পরবর্তীকালে রেকর্ড হিসেবে সংরক্ষণের জন্য তারা অডিও-ভিডিও রেকর্ডিং করতে পারে। আইনে সেই প্রভিশনটা রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল এগুলো রেকর্ড করতে পারবে। তবে এগুলো বাইরে সম্প্রচার হবে না। গণমাধ্যমের এটা করার সুযোগ থাকবে না।
শেখ আব্দুর রশীদ আরও বলেন, একটা মামলার প্রসিডিং চলছে, এটা চলা অবস্থায় কোনো একটা পয়েন্টে বা ছোট্ট একটা অর্ডারের বিপক্ষে সংক্ষুব্ধ কেউ আপিল করতে চাইতে পারে যে, এই অর্ডারটা বা অংশটুকু আমরা মানি না। সেই অন্তর্বর্তীকালীন আপিল তারা করতে পারবেন, সেই প্রভিশন অধ্যাদেশে যুক্ত হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে সেটা নিষ্পত্তি করতে হবে।
তিনি বলেন, বিচার কাজ পর্যবেক্ষণে বিদেশ থেকে পর্যবেক্ষক আনা যাবে। আগের আইনে এটি ছিল না।
রাজনৈতিক দলকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে কী আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি ছিল। তবে এ বিষয়ে কী হয়েছে সেটি আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল আপনাদের জানাবেন। আইসিটি আইনের কমপক্ষে ২০টি ধারায় সংশোধন আনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন প্রণয়ন করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধি এর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা আনয়ন, আন্তর্জাতিক আইনের প্রচলিত বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এই আইনের বিচারকাজ নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সুপারিশের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর অধিক সংশোধন সমীচীন ও আবশ্যক। এ প্রেক্ষাপটে আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের সংজ্ঞা যুগোপযোগীকরণ, অপরাধের দায় নির্ধারণ, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে বিচারকাজ ধারণ ও সম্প্রচার, বিদেশি কাউন্সেল- এর বিধান, বিচারকালে অভিযুক্তের অধিকার, অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা সংক্রান্ত বিধান, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তল্লাশি ও জব্দ করার বিধান, পর্যবেক্ষক, সাক্ষীর সুরক্ষা, ভিকটিমের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার বিধান সংযোজন করে এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়।
খসড়া নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, মানবাধিকার কর্মী, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনের সঙ্গে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ পর্যালোচনাপূর্বক আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।
যেহেতু সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন যুগোপযোগীকরণের বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে সেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪ শীর্ষক অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। আজ উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে খসড়াটি লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
এদিকে আজ প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ প্রায় সব উপদেষ্টা অংশ নেন।