৬৫ ঘণ্টা ধরে জেরার পর তৃণমূলের বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতার করলো সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূলের তৃতীয় বিধায়ক গ্রেফতার হলেন। এর আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল দুই সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্য। এবার গ্রেফতার হলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ।
তাকে গ্রেফতার করা নিয়ে রীতিমতো নাটক হয়েছে। এর আগে হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করে জেরা করার সময় বেশ কিছু এজেন্টের নাম জানতে পারেন সিবিআই তদন্তকারীরা। তার মধ্যে একজন হলো বড়ঞার বাসিন্দা কৌশিক ঘোষ।
সেই সূত্র ধরেই জীবনকৃষ্ণের নাম উঠে আসে। গত শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১২টা নাগাদ ছয়জন সিবিআই কর্মকর্তা জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে যান। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। চলে তল্লাশি। ৬৫ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চলে। তারপর সোমবার (১৭ এপ্রিল) স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটা নাগাদ বিধায়ককে গ্রেফতার করে সিবিআই।
তার আগে শুক্রবারই উদ্ধার হয় বেশ কিছু নথি, হার্ডডিস্ক ও প্রিন্টার। সিবিআই তার শ্বশুর সেন্টু সাহার বাড়িতেও তল্লাশি শুরু করে। নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মণ্ডলের বাড়িতেও সিবিআই গিয়েছিল। কিন্তু তিনি বাড়ি ছিলেন না। তাই আধিকারিকেরা তল্লাশি করতে পারেননি।
গত শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১২টা নাগাদ ছয়জন সিবিআই কর্মকর্তা জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে যান।
জীবনকৃষ্ণকে নিয়ে নাটক চরমে ওঠে শুক্রবার বেলা তিনটে নাগাদ। সে সময় শরীর খারাপের কথা বলে বিধায়ক বাথরুম যেতে চান। তারপর বাড়ির ছাদে উঠে তিনি তার দুইটি মোবাইল উত্তর দিকের পুকুরের পানিতে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। এরপর তার মোবাইলের খোঁজ শুরু হয়।
মেটাল ডিটেক্টর আনা হয়। সেই তল্লাশি রাত পর্যন্ত চলতে থাকে। বিধায়ক কেন এ কাজ করলেন, তা জানতে চান তদন্তকারীরা। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হয়, পুকুরের পানি তুলে ফেলার কাজ।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়
শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে সিবিআই আধিকারিকেরা জানতে পারেন, শুধু দুইটি মোবাইল নয়, একটি পেনড্রাইভ, একটি হার্ডডিস্কও পুকুরের পানিতে ফেলা হয়েছে। এরপর আরো দুইটি পাম্প দিয়ে পানি পুরোপুরি তুলে ফেলার কাজ শুরু হয়। আরো কয়েকটি মেটাল ডিটেক্টর আনা হয়।
শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ কী করে পুকুরে মোবাইল ফেললেন বিধায়ক, সেই ঘটনার পুনর্নির্মাণ শুরু করে সিবিআই। এই সব যখন চলছে, তখন বিধায়কের স্ত্রীর সিঁদুরের কৌটো থেকে উদ্ধার হয় মেমরি কার্ড। পুকুরের পানি পুরোপুরি ছেঁচে ফেলে মোবাইলের খোঁজ চলতে থাকে।
মানিক ভট্টাচার্য।
স্থানীয় মানুষ কাদায় নেমে মোবাইল খুঁজতে থাকেন। প্রথমে তা পাওয়া যাচ্ছিল না। ৩২ ঘণ্টা পরে কাদার মধ্যে থেকে একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। বিধায়ক তা চিহ্নিত করেন। তবে সিবিআই মনে করছে, ওই মোবাইলটি বিধায়কের স্ত্রীর। অন্য মোবাইলের খোঁজ চলছে।
এদিকে, শনিবার দুপুরে জীবনকৃষ্ণের বাড়ির পিছন থেকে ছয়টি বস্তায় রাখা প্রচুর নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে তিন হাজার চারশো চাকরি প্রার্থীর অ্যাডমিট কার্ড ও রোল নম্বর সংক্রান্ত তথ্য আছে। জীবনকৃষ্ণের কম্পিউটার ও নোটপ্যাড পরীক্ষা করে দেখা হয়।
তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ
রোববার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে মাটি কাটার যন্ত্র ও ট্র্যাক্টর নিয়ে খোঁজ শুরু হয়। রোববার রাতে সিবিআইয়ের বিশেষ দল বিধায়কের বাড়িতে আসে। ভোর পাঁচটা নাগাদ তাকে গ্রেফতার করা হয়। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে তাকে নিয়ে সিবিআইয়ের পাঁচটি কনভয় চলে যায় দুর্গাপুরে।
জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করার আগে সিবিআই স্পিকারকে জানায়নি। এর আগেও স্পিকারকে না জানিয়ে পার্থ, মানিকদের গ্রেফতার করে সিবিআই। এনিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সিবিআই ও ইডির কর্মকর্তাদের বিধানসভায় ডেকেও পাঠিয়েছিলেন। স্পিকার জানিয়েছেন, তাকে সিবিআই এখনো কিছু জানায়নি। তার আশা, রিসিভিং দপ্তরে সিবিআই গ্রেফতারির কথা জানিয়ে দেবে।