বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। সেখানে এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়েছে কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন মৌসুম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বেড়েছে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা। ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে কমেছে পানি প্রবাহ। এর প্রভাবে জোয়ার সময় কর্ণফুলী নদীর লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে হালদায়। এই লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে হালদার কার্পজাতীয় মাছের বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে।
জানা যায়, বর্তমানে হালদার বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডের পানিতে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক লবণাক্ততার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৪ মে হালদার উজানে লবণাক্ততার উপস্থিতি ও মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য পূর্ণাঙ্গ জোয়ারের সময় হালদা নদীর স্পনিং গ্রাউন্ডসহ নয়টি পয়েন্টের (আলম্মেরকূম, সাত্তারঘাট, কান্দর আলীহাট, নোয়াহাট, মাছুয়াঘোনা, নাপিতেরঘাট, আমতুয়া, রামদাশমুন্সিরঘাট ও মদুনাঘাট বড়ুয়াপাড়া) পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা যায় মা মাছের প্রজননের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্যারামিটার যেমন পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, টিডিএস, এবং তড়িৎ পরিবাহিতার মান স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক। এদিন বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ছিল (৩২ থেকে ৩৪.৫) ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র গরমের ফলে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (২২ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তুলনায় বেড়ে (৩১ থেকে ৩২.২) ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়। টিডিএস এর মান ৩০৯ থেকে ২০০০ পিপিএম, তড়িৎ পরিবাহিতার মান ৬২০ থেকে ৪০০০ মাইক্রোসিমেন্স/সেমি. এবং লবণাক্ততার মান ০.২ থেকে সর্বোচ্চ ২ পিপিটি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সর্বোচ্চ লবণাক্ততা রেকর্ড করা হয়, মদুনাঘাট হ্যাচারির বড়ুয়াপাড়ায় এবং সর্বনিম্ন আলম্মের কুমে।
রামদাসমুন্সির ঘাট থেকে আমতুয়া হয়ে নাপিতেরঘাট পর্যন্ত ১ পিপিটি এবং কান্দর আলীহাট পর্যন্ত ০.৫ পিপিটি লবণাক্ততা রেকর্ড করা হয়। অথচ স্বাদুপানিতে লবণাক্ততার স্বাভাবিক মাত্রা ০.৫ পিপিটি বা তার কম। কিন্তু হালদায় প্রাপ্ত লবণাক্ততা স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক। লবণাক্ততার মাত্রা সহনশীলতা সীমার বাইরে গেলে তা কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন আচরণে পরিবর্তন আনবে, যার ফলে স্পনিং কার্যকলাপ হ্রাস, বিলম্বিত স্পনিং বা স্পনিং সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলির ফলে হালদা নদীর মেজরকার্প জাতীয় মাছের সামগ্রিক সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে।
হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলে লবণাক্ততাসহ অন্যান্য প্যারামিটারের মান আদর্শ মানের মধ্যে চলে আসবে। অনুকূল পরিবেশ না পেলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নেমে না আসলে চলতি পূর্ণিমার জো’তে (২ থেকে ৭ মে) মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে পরবর্তী চতুর্থ জো অর্থাৎ অমাবস্যার জো (১৬-২১) মে, তা নাহলে পরবর্তী জুন মাসের পূর্ণিমার জো (১-৬) জুন অথবা সর্বশেষ (১৫-২০) জুন অমাবস্যার জো’তে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়বে।