চলছে চামড়া বেচা-কেনা: গরু ৮০০, ছাগল ১০ টাকা

চলছে চামড়া বেচা-কেনা: গরু ৮০০, ছাগল ১০ টাকা

দেশে বছরে কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রায় ৬০ শতাংশই করা হয় কোরবানির ঈদে। তাইতো প্রতিবছর ঈদুল আজহার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে কাঁচা চামড়া বেচা-কেনা।এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

সোমবার (১৭ জুন) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, পোস্তগোলা, আমিনবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে কাঁচা চামড়া বেচা-কেনা।

রাজধানীর কোরবানির পশুর চামড়া বেচা-কেনার অন্যতম জনপ্রিয় স্থান হচ্ছে সায়েন্স ল্যাব। আজ ঈদের দিন দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ট্যানারি ও চামড়াশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা ট্রাক, পিকআপভ্যান নিয়ে চামড়া কিনতে অপেক্ষা করছেন। বড় বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আছেন ছোট ও ক্ষুদ্র এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও। কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করে সেখানে এনে বিক্রি করছেন। কোরবানি দেওয়া অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও চামড়া বিক্রি করছেন। বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকেও চামড়া বিক্রি করতে আনা হচ্ছে।

চামড়া কেনা ট্যানারি ও চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার মান ও আকারভেদে প্রতি পিস গরুর চামড়া ৮শ থেকে ৯শ টাকা ও ছাগলের চামড়া ১০ টাকা দামে কিনছেন তারা। গত বছরের তুলনায় চামড়ার দামও বেড়েছে বলে দাবি করছেন তারা। তবে চামড়া বিক্রি করতে আসা ব্যক্তিরা, বলছেন তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না।

এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা।

তবে এই দামে চামড়া কিনতে দেখা যায়নি সায়েন্স ল্যাবে। বরং বর্গফুটের জায়গায় পিস হিসেবেই কেনা-বেচা হচ্ছে চামড়া। তাও আবার সরকার নির্ধারিত দামের অনেক কমে। গরুর চামড়া বিক্রি করে ক্রেতারা কিছু লাভ পেলেও ছাগল ও খাসির চামড়া বিক্রি হচ্ছে পানির থেকেও কম দামে।

খাসির চামড়ার এত কম দাম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মো. হাবিব নামের এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা হেমায়েতপুরের একটি লেদার কোম্পানিকে চামড়া সরবরাহ করি। তবে সেটা প্রসেস করে। এক পিস খাসির চামড়া কেনার পর সেটাকে কেমিক্যাল, লবণ, কাটা মিলে আমাদের প্রায় ১শ টাকার মতো খরচ হয়।  বেচতে হয় ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়।  তাই চাইলেও আমরা ১০ টাকার বেশি খাসির চামড়া কিনতে পারি না। যদি কেমিক্যালসহ অন্যান্য খরচ কম হত, তাহলে আমরা বেশি দামে চামড়া কিনতে পারতাম।

প্রতিবছর কোরবানির সময় কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তেমন একজন মো. সেলিম।  তিনি কাঁঠালবাগান এলাকা থেকে ২৫টি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন বিক্রির জন্য।

সেলিম বলেন, আমরা বাসা বাড়ি থেকে ৫০০-৬০০ টাকায় একেকটি চামড়া কিনে এনেছি।  এখানে একেকটি বিক্রি করেছি ৮শ টাকায়। এবার চামড়ার দাম মোটামুটি পাচ্ছি।

অ্যাপেক্স কোম্পানিও চামড়া কিনতে এসেছে সায়েন্স ল্যাবে। প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ আবুল আসলাম বলেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, সেই দাম আমরা চামড়া কিনতে পারি না। কারণ এসব চামড়া লবণ ছাড়াই আনা হয়। সরকার লবণসহ দাম নির্ধারণ করেছে। এছাড়া চামড়া কেনার পর কেমিক্যাল দিয়ে সেগুলো প্রসেস করতে হয়। কিন্তু কেমিক্যালের দাম অনেক বেশি। সরকার যদি এসবের দাম কমিয়ে আনে, তাহলে আমরাও চামড়ার বেশি দাম দিতে পারি।

হাজারীবাগ থেকে মাত্র একটি চামড়া বিক্রি করতে এসেছেন ফাহিম। কিন্তু ছোট গরুর চামড়া হওয়ায় সেটি কেউ কেনেনি। ফাহিম বলেন, বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু কেউ চামড়া কেনেনি। দেখি আরও কয়েকটি জায়গায় কেউ কেনে কি না? যদি না কেনে তাহলে এতিমখানায় দিয়ে দেব এই চামড়া।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এ বছর চামড়ার দাম ভালোই। গত বছর যেখানে গরুর চামড়া ৭শ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে এবার ৮শ থেকে ৯শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার সারা দেশে গরু, মহিষ, ছাগল, খাসি, দুম্বাসহ মোট এক কোটি ১০ লাখ চামড়া সংগ্রহের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS