রাজশাহী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবাল পরিবেশবাদীদের দেওয়া কথা রাখেননি। শেষ পর্যন্ত গাছ কেটেই তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছেন।বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) গাছ কাটা শুরুও হয়েছিল। তবে দুপুরে খবর পেয়ে পরিবেশবাদীরা গিয়ে সেখানে প্রতিবাদ করেন। এরপর গাছ কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা পাঁচটি গাছের মধ্যে একদিনেই তিনটি কেটে ফেলা হয়েছে। অন্য দুটির মধ্যে একটি কড়াই গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলার পর শেকড় কাটা শুরু হয়েছিল। এই গাছটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। পাকা জাম ধরে থাকা আরেকটি গাছ কাটতে গোড়া থেকে দুপুরে মাটি সরানো হচ্ছিল।
পরিবেশবাদীদের বাধায় এ দুটি গাছ প্রাণে বেঁচেছে। যে তিনটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে তার মধ্যে একটি কদম ও দুটি সেগুন।
রাজশাহী মহানগরের সোনাদীঘি এলাকায় নিজস্ব জায়গায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পরিষদ। এ স্থানটিতে আগে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট।
অনেক আগে থেকেই এখানে ২০-২২টি গাছ আছে। এরমধ্যে কয়েকটি শতবর্ষী।
রাজশাহীর স্থানীয় পরিবেশবাদীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণকে স্বাগত জানালেও তারা এসব গাছ হত্যার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন শুরু থেকেই। গাছ কেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে শুরু থেকেই প্রতিবাদ করে আসছিল রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ।
এর আগে ২২ মে তারা রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করেন। এরপর ২৫ মে সংগঠনের সদস্যরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবালের সঙ্গেও দেখা করেন। গাছ না কাটার দাবিতে স্মারকলিপি দেন।
পরিবেশবাদী এই সংগঠনের সদস্যদের দাবি, সেদিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাছ রেখেই নকশা বদলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। সে কথা তিনি রাখেননি।
এদিকে ৬ জুন জেলা পরিষদ পাঁচটি বড় বড় গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে এক লাখ ৭১ হাজার টাকায় গাছগুলো মেসার্স মেঘনা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। ১১ জুন প্রতিষ্ঠানটিকে গাছ কাটার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে সাত দিনের মধ্যে গাছ কেটে নিতে বলা হয়। আজ সকাল থেকে গাছের ক্রেতা মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সুমন তার শ্রমিকদের নিয়ে গাছ কাটা শুরু করেন।
এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পান এটি নিয়ে আন্দোলনরত রাজশাহীর স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। এসময় একটি হ্যান্ডমাইক নিয়ে সেখানে ছুটে যান রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের নেতারা। তাদের বাধায় শ্রমিকরা গাছ কাটা বন্ধ করেন।
রাজশাহী গ্রিন কোয়ালিশনের সদস্য সচিব নাজমুল হোসেন রাজু বলেন, এই গাছগুলোর কোন কোনটির বয়স ১শ বছরের বেশি। অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই গাছগুলোকে ঘিরে। এগুলো কাটা হবে না বলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সে কথা রাখলেন না। এটা দুঃখজনক। তারা আর এখানকার একটি গাছও কাটতে দেবেন না’।
পরিবেশবাদীরা অভিযোগ তুলেছেন, গাছের মূল্য নির্ধারণেও আছে শুভঙ্করের ফাঁকি। পাঁচটি গাছের মধ্যে শতবর্ষী একটি কড়াই গাছের দামই দুই লাখ টাকা হবে বলে তারা দাবি করেছেন। তাই এত কম টাকায় এসব গাছ বিক্রির কেন এমন তোড়জোড় সেই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া সামাজিক বনবিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, তাদের প্রতিনিধি সরেজমিনে গিয়ে গাছগুলো দেখে মূল্য নির্ধারণ করেছেন। এখানে এমন অভিযোগ অমূলক।
তবে কথা দেওয়ার পর শহীদ মিনার নির্মাণ এলাকার গাছ কাটার ঘটনায় আজ রাজশাহী জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের পক্ষে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।