আজ মঙ্গলবার ৫৫ বছরে পা রেখেছেন বলিউড তারকা অজয় দেবগন। ৩০ বছরের বেশি সময় বলিউডে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন এই অভিনেতা। ফিল্মি ক্যারিয়ারের ৩০ বছর পেরিয়েও তাঁর ব্যস্ততা আজও তুঙ্গে। অভিনেতা তো বটেই, সঙ্গে প্রযোজক-পরিচালকও তিনি। হিন্দি সিনেমার ব্যবসাটা তিনি ভালোই বোঝেন। সর্বশেষ যেটা প্রমাণ করলেন ‘শয়তান’ সিনেমায়।
অজয় দেবগন ১৯৬৯ সালের ২ এপ্রিল ভারতের নয়াদিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। স্বল্পভাষী এই অভিনেতার জন্মদিন নিয়ে তেমন আগ্রহ কোনো কালেই ছিল না। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ অভিনেতা বলেছিলেন সে কথা। ‘জন্মদিন আমার কাছে একটা সাধারণ দিন। কখনোই ঘটা করে জন্মদিন উদ্যাপন করি না। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব।’ এ রকমই সাদামাটা বহু হিট ছবির এই নায়ক। কাজ শেষ হলেই সোজা ফিরে যান পরিবারের কাছে। পার্টি, হইহুল্লোড় একদমই পছন্দ করেন না।
অজয়ের নাম এলে উচ্চারণ হয় কাজলের নামও। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ অজয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় কাজলের। অভিনেত্রী হিসেবে কাজল তখন সাফল্যের মধ্যগগনে। সেই সময় আচমকাই অজয়কে বিয়ে করেন তিনি। অজয় ও কাজলের বিয়ের বয়স ২৫ বছর। বলিউডের সবচেয়ে সুখী দম্পতিদের অন্যতম। কিন্তু অজয়ের জীবনে কাজল আসার আগে একাধিক নায়িকার নাম জড়িয়েছিল। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই উঠে আসে রাভিনা ট্যান্ডনের কথা। শোনা গেছে, ‘দিলওয়ালে’ ছবির শুটিংয়ে অজয়-রাভিনার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। এই বলিউড অভিনেত্রী অজয়ের প্রেমে নাকি পাগল ছিলেন। তখন বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁদের ভালোবাসার কথা প্রকাশিত হয়।
এরই মধ্যে অজয়ের জীবনে আরেক বলিউড সুন্দরীর আবির্ভাব হয়। তিনি কারিশমা কাপুর। ‘জিগার’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় অজয় আর কারিশমার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। রাভিনা এ খবর সহ্য করতে পারেননি। শোনা যায়, তাঁদের সম্পর্কের কথা শুনে রাভিনা নাকি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে অজয় এক ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘রাভিনার মনোচিকিৎসক দেখানো উচিত। আর রাভিনা শুধু নিজের প্রচারের জন্য আমার সঙ্গে ওর নাম জুড়িয়েছে।’ তবে রাভিনাও চুপ থাকেননি। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অজয় ও কারিশমার শিশু জেব্রার মতো হবে।’ তা শুনে অজয় খুব বিরক্ত হয়েছিলেন।
এ সময় অজয়ের জীবনে আসেন কাজল। একই সেটে তাঁদের দেখা হয়। অজয় তাঁর ও কাজলের রোমান্সের প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমি নিজেও জানি না, আমাদের সম্পর্ক কবে শুরু হয়। আমি কখনো কাজলকে প্রেম নিবেদন করিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এগোতে থাকে।’ তবে শোনা গিয়েছিল, কাজলকে অজয়ের চোখ বেশি আকর্ষণ করেছিল। এই বলিউড সুন্দরী অজয়ের চোখের প্রেমে পাগল ছিলেন। মেয়ে নিয়াসা আর ছেলে যুগকে নিয়ে তাঁরা এখন সুখে আছেন।
অজয় স্বল্পভাষী। মুম্বাইয়ের সাংবাদিকেরা তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে রীতিমতো বিড়ম্বনায় পড়েন। সাংবাদিকদের দীর্ঘক্ষণ সাক্ষাৎকার দিতে অপছন্দ করেন তিনি। দেখতে খুবই সাধারণ, তাই ক্যারিয়ারের শুরুতে নানা কথা শুনতে হয়েছে। তবে এসব কথায় কান দেননি তিনি। অমিতাভ বচ্চন নাকি অজয়কে ‘কালো ঘোড়া’ নাম দিয়েছিলেন।
অজয় কখনোই নায়ক হতে চাননি। তাঁর মা বীণা দুটি ছবি পরিচালনা করেন। মায়ের মতো তিনি চেয়েছিলেন পরিচালনায় আসতে। তাই শেখর কাপুরের সঙ্গে সহপরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তবে বলিউডে পা রেখেছেন কৈশোরে। ‘প্যায়ারি বহেনা’ ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীর ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন। অজয়ের আসল নাম বিশাল বীরু দেবগন। মায়ের কথায় তিনি বিশাল থেকে হয়ে ওঠেন অজয়। সত্যি অজয় আজ অজেয়। কাছের লোকজন তাঁকে রাজু বলে ডাকেন।
‘ফুল অউর কাঁটে’, ‘ওমকারা’, ‘দ্য লিজেন্ড অব ভগত সিং’, ‘গঙ্গাজল’, ‘জখম’, ‘সিংঘাম’, ‘গোলমাল’সহ একাধিক হিট ছবির এই নায়ক আরও হিট ছবির নায়ক হতে পারতেন। ‘করণ অর্জুন’ ছবিতে করণের চরিত্রের জন্য পরিচালক রাকেশ রোশনের প্রথম পছন্দ ছিলেন অজয়। আর ‘অর্জুন’-এর চরিত্রের জন্য পরিচালক চেয়েছিলেন সানি দেওলকে। কিন্তু অজয় ও সানি কাজটি করতে পারেননি। তখন করণের চরিত্রের জন্য অজয়ের পরিবর্তে সালমান খানের কথা ভাবেন রাকেশ, আর অর্জুনের চরিত্রের জন্য শাহরুখ খানকে। পরে সালমান ও শাহরুখ এই ছবিতে কাজ করেন। এমনকি ‘ডর’ ছবির জন্য আমির ও শাহরুখের আগে যশ চোপড়ার প্রথম পছন্দ ছিলেন অজয়। অজয়কে না পেয়ে শাহরুখকে নির্বাচন করেন পরিচালক।
জখম’ ও ‘দ্য লিজেন্ড অব ভগত সিং’ ছবি দুটির জন্য অজয় দুবার জাতীয় পুরস্কার পান। ২০১৬ সালে অজয়কে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করা হয়। সাধারণ জীবনযাপনে বিশ্বাসী এই বলিউড তারকা কাজের সুবিধার্থে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ কেনেন। শুটিং আর ব্যক্তিগত কাজে অজয় ছয় সিটারের এই উড়োজাহাজ ব্যবহার করেন।
অজয় দেবগন বর্তমানে ‘ময়দান’-এর মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বহুদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে এই ছবি। এর আগে ছবিটি গত বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে ছবিটির মুক্তির তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মাঠের নামকরণ করা হয়েছে ফুটবল কোচ সৈয়দ আবদুল রহিমের নামে, যার নেতৃত্বে ভারতীয় ফুটবল দল ১৯৫১ ও ১৯৬২ সালে এশিয়ান গেমস জিতেছিল। আর ‘শয়তান’–এর দৌড় তো অব্যাহত। বক্স অফিসে তোলপাড় চালাচ্ছে।