আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে না করার সিদ্ধান্ত নিলেও এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। অতীতের তুলনায় এবারের নির্বাচনে প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে সর্বাধিক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আর দল থেকে প্রার্থী বেশি হলে স্বাভাবিকভাবে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিভক্তিও বেশি হবে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিষয় না থাকায় প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে কয়েকজন করে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং প্রস্তুতি চলছে। এদের অনেকেই জেলা বা উপজেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও যার যার মতো একেক জন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেবেন। দলের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে বিভিন্নর প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেবেন। এছাড়া জেলা, উপজেলা কমিটির শীর্ষ পদে রয়েছেন এমন নেতারা নির্বাচন না করলে কোনো না কোনো প্রার্থীর প্রতি তাদের সমর্থন থাকবে। আবার এমপি-মন্ত্রীদেরও কোনো না কোনো প্রার্থীর প্রতি প্রকাশ্য না হলেও অপ্রকাশ্য সমর্থন থাকতে পারে। অতীতে দল থেকে মনোনয়ন বা নৌকা প্রতীক দিয়ে এবং বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ব্যাপারে দলের সাংগঠনিকভাবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়ার পরও অনেক জায়গায়ই এ ধরনের ঘটনা ঠেকানো যায়নি। এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বা সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। ফলে ব্যক্তিগতভাবে কোনো প্রার্থীর সমর্থন দিতে কারো কোনো বাধাও নেই।
এদিকে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক জায়গায়ই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এর আগে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং এর থেকে কোথাও কোথাও প্রাণহানিও হয়। এর পর গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলের প্রার্থীর বাইরে দল থেকে অন্য যে কাউকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে প্রায় অধিকাংশ আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক বা কয়েকজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় কোনো কোনো জায়গায় দ্বন্দ্ব সংঘাত, সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। উপজেলায়ও একাধিক প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে ভোট প্রতিযোগিতায় নামবেন, এতে দ্বন্দ্ব সংঘাতের আশঙ্কা থেকে যায় বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা এ ব্যাপার প্রকাশ্যে কিছু বলতে চান না। তারা বলছেন, এই দলীয় দ্বন্দ্ব এড়াতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতারা দ্বন্দ্ব এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন। এর পাশাপাশি উপজেলা নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে অন্য দলেরও অনেকেই প্রার্থী হতে উৎসাহিত হবে এবং নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও উৎসবমুখর হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এতে কোনো দ্বন্দ্ব বা অভ্যন্তরীণ কোন্দল হবে বলে আমি মনে করি না। আগে আমরা দল থেকে প্রার্থী দিতাম। দলীয় প্রার্থী দেওয়ার পরও দলের কেউ কেউ বিদ্রোহ করে প্রার্থী হতো, এতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কোন্দল দেখা দিত। এটা যাতে না হয় সে জন্যই দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী থাকবে না, দলের যারা প্রার্থী হবে তাদের প্রতি নেতাকর্মী যে যার খুশি সমর্থন দেবে। দল মনোনয়ন না দিলেও নেতাদের কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিতে বাধা নেই। এতে দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় দেখি না। আর দ্বন্দ্ব হবে কি হবে না সেটা তো আগেই বলা যায় না।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, দ্বন্দ্ব, কোন্দল যাতে তৈরি না হয় সে জন্যই উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশাকরি নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।