মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে মিডিয়ার মাধ্যমে মো. সাব্বির হোসেনের পরিবার জানতে পারে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। খবরটি পাওয়ার থেকে সাব্বির হোসেনের পরিবার দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
এ খবর পাওয়ার পর বুধবার (১৩ মার্চ) সকাল থেকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন সাব্বিরের বাবা ও মা। আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশীরা তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন। তার বোন বিলাপ করে সাব্বিরের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছেন। নিকটতম আত্মীয়রা অনেকেই বিলাপ করছেন আবার কেউ কেউ সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
সাব্বির টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে।
বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা। এর আগে মঙ্গলবার জাহাজটি জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সোমালিয়ায় তাদের সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
সাব্বিরের পারিবারিক সূত্র জানায়, সাব্বির হোসেন সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে থেকে এসএসসি পাস করে। ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী একটি জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন।
সাব্বিরের চাচাতো ভাই আহম্মেদ হোসেন রানা বলেন, সাব্বিরের বাবা-মা গ্রামের ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করেন। তার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় সাব্বির ছোটবেলা থেকেই তার মামার বাড়ি সহবতপুর ইউনিয়নের কাজির পাচুরিয়ার এলাকায় থাকতেন। সেখানে থেকেই পড়াশোনা করেছেন। সাব্বিরের বাবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে প্যারাইলাইজড হয়ে শয্যাশায়ী। সাব্বিরের চাকরি হওয়ার পর তার মা শয্যাশায়ী স্বামীকে নিয়ে সহবতপুর তার বাবার বাড়ি বসবাস করেন। সহবতপুরের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে এখন কেউ আর থাকেন না। একমাত্র উপার্জনক্ষম সাব্বিরের কিছু হয়ে গেলে তাদের আর চলার উপায় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, গতকাল দুপুর থেকেই সাব্বিরের ফোন বন্ধ। কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। এখনও পরিবারের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। মুক্তিপণ চেয়েছে কিনা সরকারের কাছে তাও জানি না। তবে যতদ্রুত সম্ভব সাব্বিরসহ সবাইকে যেন নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয় সেই দাবি জানাই সরকারের কাছে।
সাব্বিরের বোন মিতু আক্তার বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ সোমবার কথা হয়েছে। এর আগে আমার ফোনে তার মাথা ন্যাড়া করার ছবি পাঠিয়েছে। সাগরের কি যেন রেখা অতিক্রম করার পর জুনিয়রদের মাথা ন্যাড়া করতে হয়। এটা নিয়ে আমরা ভাই-বোন হাসাহাসি করেছি। বিকেলের পর আবার ফোন করে সাব্বির। বললো বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার ফোন করেছে কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। আর বাবা-মার সঙ্গে কথা বলতে পারেনি সাব্বির। পরে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে এমন খবর গণমাধ্যমে দেখার পর তার ফোনে আর যোগাযোগ করতে পারিনি বন্ধ থাকার কারণে। বাবা-মা এখন শুধু কাঁদছে সান্ত্বনাও দিতে পারছি না। সরকার থেকেও কোনো সুখবর পাচ্ছি না। আমরা ভাইকে ফিরে পেতে চাই।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে। আশা করি দ্রুত সুখবর পাওয়া যাবে।