প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে দেশের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হতে পারে জানিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের পেছনে ফেলে আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগ নেই।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরির মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস পার্টনারশিপ অন দ্য রাইটস অব পার্সনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস মাল্টিপার্টনার ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এই মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন)।
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের সমাজের একটি বড় অংশ ভিন্নভাবে সক্ষম। তাদের নানা রকমের প্রতিবন্ধিতা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভীষণ রকমের সংবেদনশীল মানুষ। তার নেতৃত্বে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনসহ বিভিন্ন আইন করেছি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে আজকে যে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার জায়গা তৈরি হয়েছে, এক সময় তা ছিল না।
প্রতিবন্ধী চাকরি মেলা সমাজে পিছিয়ে এসব মানুষের জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তাদের সমানে একটি আশার আলো নিয়ে আসছে এসব মেলা। আমরা বারবার অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ ও তাদের প্রবেশগম্যতার কথা বলছি। একটি উপযুক্ত পরিবেশের কথা বলছি। এটি আমাদের সব ক্ষেত্রে তৈরি করতে হবে। আমরা এখনো আমাদের ভবনগুলো তাদের প্রবেশগম্য করে তুলতে পারিনি। এটা কঠিন কিছু নয়। শুধু দরকার আমাদের একটু সংবেদনশীলতা, সহমর্মিতা, সচেতনতা। তাহলে আমরা এ সমস্যাগুলো অতিক্রম করতে পারি।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা বলার জন্য ইশারা ভাষার প্রমিতকরণের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরে আছে৷ সেই প্রমিতকরণটি আমাদের করা দরকার। প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণের বিভিন্ন টুলস আছে। সেগুলোর একটি নির্দিষ্ট মান ঠিক করা দরকার। এগুলো যতদ্রুত আমরা করতে পারবে, তাহলে একটি স্বচ্ছ-সঠিক ডাটাবেজ সারাদেশে আমরা করতে পারবো। তখন তাদের কি চাহিদা, তাদের কেমন দক্ষতা সেটা নিরূপণ করে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা সহজ হবে।
সংবিধান অনুযায়ী আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও তাদের অধিকার ভোগ করার উপযুক্ত পরিবেশ আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। আমরা যে লক্ষ্যে সবাই একসঙ্গে এগিয়ে চলেছি, তাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা দিয়ে আমাদের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হতে পারেন। আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাদের সম্ভাবনাকেও কাজে লাগাতে হবে।
প্রতিবন্ধীদের এ চাকরি মেলার লক্ষ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কে বিবিডিএন এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) মুর্তজা রাফি খান বলেন, এ মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো জানান দিচ্ছে তারা প্রতিবন্ধীদের পাশে আছেন এবং তাদের চাকরি দিতে আগ্রহী। প্রতিবন্ধীদের চাকরির ব্যবস্থা করতে শুধু এ মেলার আয়োজন নয়, আমরা আগামী দিনেও আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবো। প্রতিবন্ধীদের প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে চেষ্টা করবে, এ প্রত্যাশা করি।
এ সময় বিবিডিএন এর উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন কাসেম খান৷ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার পিটার, সাদ গিলানী, টিম গ্রুপের এইচআর প্রধান খন্দকার ইমাম, এক্সেস বাংলাদেশের ইনক্লোশন লিড তাসলিম জাহানসহ মেলায অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অসংখ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এই চাকরির মেলা সোমবার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়। মেলায় আরএমজি, আইটি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রি, এনজিওসহ জাতীয় ও বহুজাতিক ৩১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। প্রায় ২৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এ মেলায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে চাকরির আবেদন করে। ৪০ জন প্রার্থীকে মেলায় নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়।