গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস; চলতি বছর ৫ জানুয়ারি বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনা দায়েরকৃত মামলার তদন্ত নিয়ে কার্যত ‘অসহায়’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই দুই ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ডরা’ অজানা।যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তারাই নাকি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ অবস্থায় মামলা দুটির তদন্তভার ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ (জিআরপি) থেকে পৃথক দুই সংস্থায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, মোহনগঞ্জ-বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনার পর আইন শৃঙ্খলারক্ষাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের পক্ষ থেকে জড়িতদের শনাক্ত করার দাবি করা হয়। সন্দেহভাজন দুজনকে শ্যোন অ্যারেস্টও দেখানো হয়। কিন্তু মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার দুই মাস ও বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার এক মাসের বেশি সময় পার হলেও মামলাগুলোর কোনো অগ্রগতি নেই।
শ্যোন অ্যারেস্ট হওয়ার হলেন- বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবী ও যুবদল নেতা কাজী মনসুর আলম। তাদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে ডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছিলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনায় এ দুইজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। ঘটনার আগে তারা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পরিকল্পনা করেছিল। এ বিষয়ে মনসুর জবানবন্দিও দিয়েছেন। প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কারণেই তাদের দুজনকে বেনাপোল এক্সপ্রেসের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে ডিবি তাদের ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
রাজধানীর তেজগাঁও ও গোপীবাগে দুটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শিশুসহ আটজন নিহত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এ দুই অপকাণ্ডে বিএনপি নেতাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে দুজনকে ঢাকা রেলওয়ে থানায় দায়েরকৃত পৃথক দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা আইনে হওয়া এ দুই মামলায় আর কেউ গ্রেপ্তার হননি।
ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ (জিআরপি) দুই ট্রেনে আগুনের ঘটনায় তদন্ত জারি রেখেছে। রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন মামলাগুলো তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু চালাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এসপি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, মোহনগঞ্জ ও বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সন্দেহভাজনদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
তবে মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বেনাপোল এক্সপ্রেসের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করেছি। অনেকটুকুই অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের মামলায় এখন তেমন অগ্রগতি নেই।
তিনি জানান, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ, আশপাশে উপস্থিত ভাসমান ব্যবসায়ী, আহতদের সঙ্গে সেদিন সফররত অন্যান্য যাত্রী ও নানা দিক মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি।
এ সময় তাকে ট্রেনে আগুনের ঘটনায় বিএনপি নেতাসহ গ্রেপ্তার ৮ আসামির মধ্যে কেবল দুজনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, একই সঙ্গে অন্যান্যদের কোন কোন মামলায় দেখানো হয়েছে জানতে চাওয়া হয়। কৌশলী উত্তরে তিনি বলেন, আমরা তাদেরকেই গ্রেপ্তার করেছি ও রিমান্ডে এনেছি যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি। নির্দোষ কোনো ব্যক্তিকে আমরা কোনো হয়রানি করছি না। মামলা তদন্তাধীন।
এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাননি রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন।
এর আগে, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গত ২১ ডিসেম্বর র্যাব-১ সন্দেহভাজন হিসেবে ৯ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছিল। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। র্যাব বলেছে, ট্রেনে আগুন দেওয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
র্যাব-১ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, মোহনগঞ্জ ট্রেনে আগুন লাগানোর মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার ঘটনা তদন্তে নেমে র্যাব-৩ ‘জড়িত চারজনের নাম জানতে পারার কথা’ জানায়। গত ২১ ডিসেম্বর কমলাপুর রেলস্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যাদের নাম জানা গেছে তাদের দুজন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী। বাকি দুজন ভাসমান (নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই)।
পরে অবশ্য তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তারা যাদের নাম পেয়েছিলেন তাদের সঙ্গে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া ছবির সঙ্গে কোনো মিল ছিল না।
ডিবির কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গ্রেপ্তার যুবদল নেতা মনসুরের কাছ থেকে ট্রেনে অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায়ও এই দুই নেতা জড়িতও বলেও দাবি করেছে ডিবি। কিন্তু এখন ‘মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই’ বলছেন ডিবি কর্মকর্তারাই।