বাংলাদেশে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
একইসঙ্গে কেউ কোনো কারসাজি করে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্যে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য করতে। যাতে সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। আমরা এ বছরের শুরু থেকে স্মার্ট বাজার সিস্টেম চালু করতে চাই। যাতে উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা, আমদানীকারীদের থেকে ভোক্তা এরমধ্যে যেন কোনো হস্তক্ষেপ না থাকে। আপনারা জানেন অনেক পণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের কাজ শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এটার নিশ্চয়তা দিতে পারি।
এক কোটি পরিবারকে কবে নাগাদ টিসিবির স্মার্ট কার্ড দিতে পারবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টিসিবির যে এক কোটি পরিবার রয়েছে তাদের তথ্য নিয়েছি যাচাই-বাছাই চলছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই হয়ে গেছে সেগুলোর কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে। আশা করছি, জুনের মধ্যে কার্ড দিতে পারবো। তারজন্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে না। এখন যে তালিকা আছে সেটা ধরেই দেবো। এটা হলে ডিজিটাল যে ব্যবস্থা তখন সবাই হাতে হাতে পারে।
তিনি বলেন, যারা বাজারে উৎপাদক, আমদানিকারক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে যারা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবো। যারা কৃত্রিম সংকট, মজুদদারি করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। তবে যারা ভালোভাবে ব্যবসা করবেন তাদের সহযোগিতা করবো। তাদের আস্থা নিয়ে কাজ করতে চাই।
ভারত থেকে আমাদের পণ্য আমদানি করতে হয়, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের সুবিধা মতো পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য ভারতে থেকে আসে সেগুলো আমদানিতে একটু সহজ করা হবে বলে আশা করছি। একইসঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাবো।
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি সিন্ডিকেট শব্দের সঙ্গে অভ্যস্ত না। দেশে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। আমি পুঁজিবার নিয়ে কাজ করেছি। তখন কোনো সিন্ডিকেট, মজুদদার কোনো কারসাজিকারি করতে পারেনি। এখানেও আমরা সফল হবো। ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে কাজ করতে হবে। আমাদের যথেষ্ট সুযোগ আছে, তাদের অনুরোধ করবো, তাদের নিয়ে বসবো। আমরা তাদের বলবো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার সঙ্গে ব্যবসা করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। কিন্তু কোনো ধরনের কারসাজি করে, সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করলে আমরা শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেবো।
তিনি বলেন, কোনো ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষার জন্য না। জনস্বর্থে কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে কাজ দিয়েছেন। সেটা আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে করবো। ভোক্তাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমাকে একটু সময় দেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। কোনো ভয়ভীতি না। এদেশে যারা ব্যবসা করেন সবাই দেশপ্রেমিক। আমরা বিশ্বাস করি, তারা মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। আমাদের দায়িত্ব থাকবে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে। বিশেষ করে যারা আমাদের অ্যাসেনশিয়াল পণ্যগুলো নিয়ে কাজ করেন। তেল, চিনি, লবণ এ ধরনের পণ্য নিয়ে যারা কাজ করেন তারা যেন স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করেন এটা আমরা নিশ্চিত করব।
তিনি বলেন, কৃষিতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিতে আমরা অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছি। চাল, শাক-সবজি, মাছ, ডিম, মুরগি কোনো কিছুতে আমাদের ঘাটতি নেই। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনাটা, স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা করতে চাই। উৎপাদক বা আমদানিকারক থেকে ভোক্তাপর্যায়ে সরবরাহের সময় কমিয়ে আনা। সরবরাহ যদি ভালো থাকে তাহলে কেউ বাজারে কারসাজি করার সুযোগ পাবেন না এবং কেউ উচ্চ মূল্যে বিক্রি করারও সুযোগ পাবেন না।
তিনি বলেন, আমরা রপ্তানিকে বৈচিত্র্যময় করতে চাই। আমরা গার্মেন্টসের ওপর অনেক নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন গার্মেন্টসের মতো সুযোগ-সুবিধা চামড়া শিল্পে যারা আছেন এবং পাট শিল্পে যারা আছেন। ওখানে আমাদের মূল্য সংযোজন অনেক বেশি।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো কিছু উৎপাদন করে না, আমদানিও করে না। বাজার ব্যবস্থাটাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে, ভোক্তা যাতে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পায় সেটা নিশ্চিত করা হলো আমাদের কাজ।
আহসানুল ইসলাম বলেন, কেউ কারসাজি করার চেষ্টা করলে আমরা শক্ত হাতে দমন করব। বিশেষ করে মজুদদারি। আমরা দেখি রমজান এলেই কিছু ব্যবসায়ী, আমি ব্যবসায়ী বলবো না তাদের অসাধু কিছু গোষ্ঠী তারা ব্যবসার নামে এই অপকর্মগুলো করে। মজুদদারিকে আমরা শক্ত হাতে দমন করব। আমাদের সব ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে সচেতন থাকবে।