সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ফুলেকোচা কলেজে অফিস সহকারী পদে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে চূড়ান্ত না করায় বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এসময় বিক্ষোভ, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নিয়োগ পরীক্ষার দুদিন আগেই এ ঘটনা ঘটে। এর জেরে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আর শনিবার বিকেলে কলেজের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ফুলকোচা কলেজে অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য গত ৮ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দুটি পদে ৩২ জন প্রার্থী আবেদন করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ১৬ জন বৈধ প্রার্থীর নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৩ জানুয়ারি। এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু সভাপতি আব্দুর রশিদ তালুকদার ও অধ্যক্ষ মাসুদ রেজা পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে মেধাসম্পন্ন প্রার্থী নিয়োগ দিতে চান। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা কলেজে গিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। তারা দাবি করেন, অধ্যক্ষ মাসুদ রেজা ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে দুটি পদে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলামের ছেলেকে চূড়ান্ত প্রার্থী করার করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে আসছেন। তাদের দাবি না মেনে নেওয়ায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হাসেম আলী, ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিল্লাত, ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগসহ কয়েকজন কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেন। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। শনিবার বিকেলে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের হস্তক্ষেপেই আবার তালা খুলে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী শাহ আলী বলেন, আমি কলেজ খোলার পর ওরা ১০/১৫ জন এসে হামলা করে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং পটকা ফুটিয়ে চলে যান।
অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান বলেন, কলেজে নিয়োগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার লোকজন এসে তালা ঝুলিয়ে দেন। প্রিন্সিপাল স্যারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ছাত্রছাত্রীদের বের করে দিয়ে আমাদের ভয়ভীতি দেখান।
এ বিষয়ে ওই কলেজের ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মো. আল-আমিন ও রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দিনের ঘটনায় আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
অধ্যক্ষ মাসুদ রানা বলেন, আমাদের সভাপতি সাহেব মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু কিছু লোক তাদের পছন্দের প্রার্থীকে চূড়ান্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। আমরা তাদের দাবি প্রত্যাখান করার কারণে মিথ্যা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ এনে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেন। ১৩ তারিখের নিয়োগ পরীক্ষা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে নিয়োগের আগেই অধ্যক্ষ দুই প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এটা আমরা জানতে পেরে কলেজে অবস্থান করেছি। আমরা চাই, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী নেওয়া হোক।
৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বলেন, অনেকদিন ধরে নিঃস্বার্থভাবে দলীয় কাজ করছি। ফুলকোচা কলেজের একটি ছোট পদে আমার ছেলেকে দিয়ে দরখাস্ত দিয়েছি। শনিবার পরীক্ষার তারিখ ছিল। তার আগেই জানতে পেরেছি, অধ্যক্ষ আমার ছেলেকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে নিয়েছেন। ফলে দলীয় ছেলেপেলে নিয়ে কলেজে গিয়েছি। সেখানে তারা হয়তো কিছু কথা বলেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু জানি না। চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে বলেছে। আমি কলেজের তালা খুলে দিতে বলেছি। আমি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যও না। ওটা নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নাই।