কেউ আমাদের কোনো টাকা দেয়নি: চুন্নু 

কেউ আমাদের কোনো টাকা দেয়নি: চুন্নু 

টাকা নিয়ে নির্বাচন করেছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, যারা এগুলো বলছেন অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে বলছেন। আসল কথা হচ্ছে কেউ আমাদের কোনো টাকা দেয়নি এবং কোনো ব্যবসায়ীও আমাদের কোনো টাকা দেয়নি।অনেক সময় তো এটা হয়, কেউ আমাদের টাকা দেয়নি।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

চুন্নু বলেন, তারা ঘরে এসে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতো। সেখানে আরও অনেকে ছিল তারা তো এ রকম বক্তব্য দেননি। ইয়াহিয়াকে তো এর আগেও একবার বহিষ্কার করা হয়েছিল। সে সময় তিনি সিলেটে আমাদের প্রার্থীর লাঙ্গলের প্রচারণা না করে নৌকার প্রচারণা করেছিলেন। এরপর তিনি লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়ে মনোনয়ন নিয়েছেন। ওই ছেলেটার পার্টির প্রতি আনুগত্য কখনোই ছিল না। সেন্টু দলের একজন ভালো কর্মী ছিল। তবে গতকাল আবেগের বসে যেভাবে দলের বিরুদ্ধে কথা বলেছে দল যদি সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তো দলের কাঠামো ঠিক রাখা যাবে না। নেতৃত্ব তখন প্রশ্নের মুখে পড়বে। দল হিসেবে সফলতা-ব্যর্থতা দুটোরই দায়ভার আমাদের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ওপর পড়ে। আমরা সেটা নিতেও প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু তার মানে এ না পাবলিকলি এভাবে কথা বলবে।  

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, সেন্টুর এখানে নৌকার প্রার্থী ছিল, সে নির্বাচন করবে না সেটা আমাকে আগেই জানিয়েছিল। যে লোকটা ভোট চায়নি তার তো এ রকম অভিযোগ করার কথা না। আর ইয়াহিয়া সে নিজেও চেষ্টা করেছিল আমরাও চেষ্টা করেছিলাম তার এলাকায় নৌকা না থাকে। কিন্তু নৌকা ছিল। এজন্য সে খুবই সামান্য ভোট পেয়েছে। এটা উল্লেখ করার মতো না। আসলে এখানে খুব একটা প্রার্থী ছিল না।  অল্প কিছু সংখ্যক ছিল। যারা এখানে ছিল অনেকেই আছে ৫০০ ভোটও পাবে না, তারপরও তারা নির্বাচন করতে চেয়েছিল। আমরা মনোনয়ন দিয়েছিলাম, কোনো সিটিই খালি রাখিনি।

অভিযোগের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেন, দেশের কোনো লোক যদি বলতে পারে আমি ও আমার চেয়ারম্যান নির্বাচন বা দলের জন্য কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি, এটা যদি প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি পদত্যাগ করবো। অনেকে ধারণা করেছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে ২৬ সিট তারা ছেড়ে দিয়েছে, শত শত কোটি টাকা দিয়েছে এটা কেন তাদের আমরা দেইনি এটা তাদের মনের আসল ব্যথা, আসল ব্যথা কিন্তু ইলেকশন যে রীতিমতো হয়নি পাস করিনি এটা তাদের আসল ব্যথা না। দুই একজন ছাড়া সবার ধারণা আমরা শত শত কোটি টাকা পেয়েছি তাদের দিলাম না কেন? সরকার আমাকে টাকা দেবে কেন? আর সরকার যদি টাকা দেয় এটা কী জানতে কারও বাকি থাকবে। আর শত শত কোটি টাকা হজম তো করার মতো মানুষ আমি না। এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে আমার একটি বাড়ি নেই, এত টাকা পেলে তো বিদেশ চলে যেতাম।  সেখানে আরামে থাকতাম বলে তিনি উল্লেখ করেন।

চুন্নু বলেন, যারা এগুলো বলছেন আবেগপ্রবণ হয়ে বলছেন। আসল কথা হচ্ছে কেউ আমাদের কোনো টাকা দেয়নি এবং কোনো ব্যবসায়ীও আমাদের কোনো টাকা দেয়নি। অনেক সময় তো এটা হয়, কেউ আমাদের টাকা দেয়নি। এসব ফালতু অভিযোগ তবে একটি অভিযোগ ঠিক আছে নির্বাচনে আমরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাইনি। এটার মধ্যে আমাদের দায়দায়িত্ব আছে। এ দায়দায়িত্ব নিয়ে আমরা ঘরের মধ্যে আলোচনা করতে পারতাম। তারা যেটা করেছে এটা আমার মনে হয় বাইরে থেকে কারো ইন্ধন আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগও তিন চারবার ভেঙেছে, বিএনপিও অনেকবার ভেঙেছে এটা চলমান প্রক্রিয়া, একটি দল ট্রেনের মতো যাচ্ছে সেখান থেকে কেউ কেউ নেমে যায় আবার নতুন যাত্রী ওঠে।

দল ভাঙনের মুখে পড়ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল ভাঙতে গেলে একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া লাগে এখানে কিছু কতিপয় ব্যক্তি যারা জামানত দূরের কথা ২০০ ভোটও পাননি এমন প্রার্থীরা যারা ভেবেছিল আমরা টাকা পেয়েছি তাদের টাকা দেইনি এটাই কারণ ছিল। এখানে ভাঙা ভাঙির কোনো বিষয় নেই বলেও তিনি জানান।

এদিকে গত রোববার (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।  

একইদিন রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দিনব্যাপী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণকারী পার্টির প্রার্থীদের এক বিশেষ সভায় শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং ইয়াহিয়া চৌধুরী পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বৈরাচারিতার কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পার্টি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় দলটির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে।  

গত বুধবার জাপার বনানী কার্যালয়ে নির্বাচনে অসহযোগিতা, স্বজনপ্রীতি এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS