রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারসহ ১৭ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগ! তাদের মধ্যে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনবারের সংসদ সদস্য এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকও রয়েছে। তারা, উপজেলা পর্যায়ে কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার এমন হটকারি কাণ্ডকে পাগলামি বলেই মনে করছেন।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বাগমারায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক। আর দলের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এ নিয়ে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীদের এক পক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের পক্ষ নিয়েছেন। আর অপরপক্ষ আবুল কালাম আজাদের। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার কালাম গ্রুপের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম হেলালের সভাপতিত্বে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বলা হয়, জেলা সভাপতি অনিল কুমার সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সভা শেষে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অনিল কুমার সরকার, রাজশাহী-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক মণ্ডল, মতিউর রহমান টুকু ও আফতাব উদ্দিন আবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন প্রামাণিকসহ ১৭ নেতাকর্মী বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা সবাই এমপি এনামুল হকের অনুসারী।
যদিও এ সিদ্ধান্তকে উড়িয়ে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কাজেই আমাকে বা অন্য কাউকে বহিষ্কারের এখতিয়ার তাদের নেই। এটা তারা করতে পারেন না। বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি।
এদিকে, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেছেন, যারা এ ধরণের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও বেআইনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রবীণ এই রাজনীতিক প্রশ্ন করেন-উপজেলা আওয়ামী লীগ জেলা সভাপতিকে দল থেকে বহিষ্কার করে কীভাবে? এটা কেউ কোনোকালে শুনেছে! এগুলোকে পাগলামি ছাড়া আর কী বলবো’!
তবে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুল বলেন, জেলা সভাপতি অনিল কুমার সরকার একই সঙ্গে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তাই আমরা উপজেলা কমিটি থেকে অনিল সরকারকে বহিষ্কার করেছি। এসব সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, এটা কী করে সম্ভব! জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে একমাত্র দলের সভানেত্রীই অব্যাহতি বা বহিষ্কার করতে পারেন। অন্য কারো সে ক্ষমতা নেই। বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা কাজটা কোনোভাবেই ঠিক করেননি। নির্বাচন চলছে। এখন এসব পাগলামি করার সময় না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩
এসএস/জেএইচ