দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা ও নির্মাতা সোহেল রানা। অভিনেতার আরও একটি বড় পরিচয় তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে পর্দায় তাকে দেখা না গেলেও রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি। যেহেতু তিনি মুক্তিযোদ্ধা, তাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা নন, সম্মান চান বলে জানিয়েছেন এই অভিনেতা।
সম্প্রতি দেশের এক গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ এবং নিজের কাজের নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন সোহেল রানা। এ সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
সোহেল রানা বলেন, কোনো বিশেষ দিন কিংবা উপলক্ষে ঘটা করে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের বিজয়কে মনে করা বা সেটা নিয়ে আলোচনা করা আমার একদম পছন্দ নয়। বিজয়, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এক দিনের নয়, এটা সারা জীবন মনে রাখার বিষয়। কিন্তু এখন আমরা শুধু বিশেষ দিন এলেই এই বিষয়ে কথা বলি। এখনকার অধিকাংশ মানুষই তো এই দিবসের মহত্ত্ব বোঝে না।
অভিনেতা আরও বলেন, তখন সময়ের প্রয়োজনে দেশের জন্য যেটা করা দরকার ছিল, আমরা সেটাই করেছি। দেশের জন্য করেছি। তার জন্য দেশের মানুষ বুকে টেনে নেবে, দুটো ভালো কথা বলবে, আমি শুধু এতোটুকুতেই সন্তুষ্ট।
কিন্তু এক দিনের সম্মান বা ভালোবাসা চাই না আমি। এসবের জন্য যুদ্ধ করিনি আমরা। আর মুক্তিযুদ্ধ তো শুধু আমার একার নয়। তখন প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে যারা যুদ্ধ করেছে, এটা তাদের সবার। সেই সাত কোটি মানুষের। তাদের সবার একটা চাওয়া, উপযুক্ত সম্মান।
এ সময় সোহেল রানার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছেন কি না? জবাবে অভিনেতা বলেন, সম্মান পাচ্ছি। তবে এটাকে ঠিক কতটুকু সম্মান বলে সেটা জানি না। আমরা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম বলেই আমাদের মুক্তিযোদ্ধা উপাধি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে গিয়ে আমরা উপযুক্ত সম্মান পাই না।
এ ছাড়া আমাদের যে সনদপত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানেও লেখা সাময়িক। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি তালিকা অনুযায়ী, আমাদের একটা ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু ভাতা কী হিসাবে আসে? আমরা তো দেশের জন্য চাকরি করি না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উপযুক্ত সম্মান চাই, কোনো ভাতা নয়।
বর্তমান সংস্কৃতির কথা উল্লেখ কর বরেণ্য এই অভিনেতা বলেন, বর্তমানে আমাদের সংস্কৃতি বলতে জগাখিচুড়ি। আগে আমাদের সংস্কৃতি ছিল গানবাজনা। বিভিন্ন ধরেন গান, যেমন- জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়ালি, দেহতত্ত্ব ও যাত্রা।
কিন্তু এখনকার মানুষরা এসব কতটুকু দেখেন? বা বর্তমান প্রজন্মের কয়জনই এগুলো সম্পর্কে জানে। আমাদের দেশে ভিনদেশি সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে। এখন আর নারীদের আগের মতো লম্বা চুলে কিংবা শাড়িতে দেখা যায় না। উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা হারাচ্ছিও অনেক কিছু। আর শিল্প-সংস্কৃতি ছাড়া একটা দেশ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।