রেণুকা দেবী চৌধুরানীর জন্ম ময়মনসিংহের বাঘবেড়ে ১৯০৯ সালের ৩১ জুলাই। মাত্র ১০ বছর বয়সে ময়মনসিংহের কালীপুর ও মুক্তাগাছার জমিদার বংশের কৃতী পুরুষ ধীরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ী চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। দুই বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের সেরা রাঁধুনিরা তখন জমিদারবাড়িতে আসতেন, রান্না করতেন আর বাড়ির বউদের শেখাতেন। সেই সুবাদে ছোট বয়সেই হরেক রকম রান্নায় সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। এভাবেই আমিষ, নিরামিষ ও মিষ্টান্নের শত শত পদ রাঁধতে শিখেছিলেন রেণুকা দেবী।
কখনো কখনো শুধু বর্ণনা শুনে রান্না করতে হতো খাবারের কোনো পদ, তেমনই একটি রান্নার কথা বিশেষভাবে নিজের বইয়ে বলেছিলেন রেণুকা। নাম ‘আজিজুল হক খিচুড়ি’, যা ঠিকঠাক রান্না করতে অনেক পরিশ্রম করেছিলেন এই নারী।
শুধু রেসিপিই না, তাঁর ‘রকমারি আমিষ রান্না’ বইতে মাছ কাটাকুটির সঠিক নিয়মও বাতলেছেন এই জমিদারপত্নী। ইলিশ মাছে কোন অংশ ফেলনা আর কোন অংশ কীভাবে কুটতে হয়, সেটা সবিস্তার ‘রকমারি আমিষ রান্না’ বইতে উল্লেখ করেছেন তিনি। বইটি রেণুকা দেবীর লিখে রাখা পাণ্ডুলিপি ধরে সম্পাদনা করেছেন তাঁর পুত্রবধূ শীলা লাহিড়ী চৌধুরী। সেই বই থেকেই ইলিশ মাছ কাটার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো—
ইলিশ মাছের আঁশ ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে তারপর পছন্দমতো টুকরো করতে হয়। মাছ কেটে অজীর্ণকারক কয়েকটি জিনিস মাছ থেকে ফেলে দেবে। মুড়ো আগে কেটে তারপর গাদা, পেটি ও ল্যাজা আলাদা করো।
১. গাদার কাঁটায় দুধারে দুটো সাদা সুতোর মতো আছে। একে পৈতে বলে। টেনে ফেলে দাও।
২. ল্যাজার পাখনার মাঝখানে কালোমতো ক্ষত থাকে। একে কয়লা বলে। এটা গোল করে কেটে ফেলো।
৩. মুড়োর দুটি ফুলকো বের করে ফেলো। এর সঙ্গে দুটি গোল নখের মতো আসবে, একে ঘোড়ার ক্ষুর বলে।
৪. দুই কানকোর ভেতর থেকে সরু টিকটিকির ল্যাজের মতো বের করো।
এখন পছন্দমতো গাদা ও পেটির টুকরো করে নাও। পেটির তলার দিকে যে তেকোনা কাঁটা থাকে, তা সমস্ত পেটি থেকে কেটে বের করো। ল্যাজার দিকের মাছ চাকা চাকা করে কেটে নাও। মাছ আর ধোবে না।