জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমা শক্তি উঠেপড়ে লেগেছে। আর বিএনপি ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে চক্রান্তের পথ বেছে নিয়েছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে সবাইকে জাগ্রত থাকতে হবে। সামনের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে, শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন ১৪-দলীয় জোটের নেতারা। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভার আয়োজন করে ১৪-দলীয় জোট।
স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, শেখ হাসিনা সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নেতৃত্ব দিয়ে। তিনি হাতে গোনা কয়েকটা রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তো অনেক ঈর্ষা হয়; এত ছোট দেশ, এত বড় নেতা কী করে হয়?
বিএনপির উদ্দেশে আমির হোসেন আমু বলেন, তোমরা নির্বাচনকে ভয় পাও। তাই নির্বাচন দিয়ে জিয়াউর রহমান কোনো দিন ক্ষমতায় আসে নাই, নির্বাচন দিয়ে তোমরা কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবা না। তার জন্যই তোমরা নির্বাচন নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র ও অনির্বাচিত সরকার দিয়ে এই দেশকে আবার পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার একটা অপচেষ্টা করছ। যেটা হতে দেওয়া যাবে না।
সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হচ্ছে এবং সংবিধানের ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতিমধ্যে আরও অনেকগুলো জোট আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। সংবিধানের ভিত্তিতে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত।’
বিএনপি ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে চক্রান্তের পথ বেছে নিয়েছে মন্তব্য করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি নির্বাচনের আগে একটা অস্বাভাবিক সরকার, সংবিধান স্থগিত করে দেওয়ার ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে। নির্বাচনকে বিএনপি অসিলা করেছে। জামায়াতে ইসলাম যেমন ইসলাম না, তেমনি বিএনপির গণতন্ত্র মানে গণতন্ত্র না। বিএনপির গণতন্ত্র মানে রাজাকারের গণতন্ত্র, ওই গণতন্ত্রে রাজাকারেরা বসবাস করে। তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের লোক থাকে না। তাই তারা সংবিধান বানচালের কথা বলছে।
এ বছর বিশ্বের ৩৮টি দেশে নির্বাচন হবে, কিন্তু পশ্চিমারা বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘এই জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে জাগ্রত থাকতে হবে। যাতে করে কোনো অপশক্তি সফল হতে না পারে। তারা যদি সফল হয়, তাহলে বাংলার স্বাধীনতা আবার ভূলুণ্ঠিত হবে।’
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন, তৃতীয় বিশ্বের কোনো সরকারপ্রধান এভাবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের জন্য বক্তব্য দিচ্ছেন না। অনেক বামপন্থী বন্ধুরা বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধুয়ে ধুয়ে পানি খাবেন আপনারা? যখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এখানে ঘাঁটি করবে, তখন আপনাদের অস্তিত্ব কোথায় যাবে? আপনারা এখনো টের পান নাই। শেখ হাসিনা বুঝতে পারছেন বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে পশ্চিমাদের কাছে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য আজকে প্রধানমন্ত্রী লড়াই করছেন, সংগ্রাম করছেন। তাই সামনের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন, আমাদেরও নিতে হবে।’
যতই নির্বাচন এগিয়ে আসবে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল এগিয়ে যাবে এবং বিএনপি-জামায়াত চুপসে যাবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে দেখেন নাই যে কী লাফালাফি করছে বিএনপি-জামায়াত? এখন কি সেই লাফালাফি আছে? চুপসে গেছে। আর কয়েক দিন গেলে খবর পাওয়া যাবে না।
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, দেশে সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন হবে। কোনো বিদেশি প্রেসক্রিপশনে নির্বাচন হবে না।
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ-বিএসডি) আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে সিকদার, তরীকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আলী ফারুকী প্রমুখ।