রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত জুলাই মাসে ভয়ঙ্কর রূপ নিলেও আগস্টেও বাড়ছে ডেঙ্গু। পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর অধিকাংশ হাসপাতাল। আর চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৪৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গুর যে হিসাব দিচ্ছে তার বাইরেও হাজার হাজার ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। যারা হাসপাতালে না এসে বাসায়ই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা হাসপাতালের হয়রানি আর দুর্ভোগ এড়াতে এমনটি করছেন। এসব রোগীর হিসেব সরকারি খাতায় নেই। আবার অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু রোগীর সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে দেশে সত্যিকারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কি তার সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, এ বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে হিসাব আসছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। অনেক ঘরেই জ্বরের রোগী আছে, যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন না। ঘরে থেকেই ভালো হয়ে যাচ্ছেন। সেগুলোতো রিপোর্টে আসে না।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু হলে অনেকে রক্ত দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে যায়। রক্ত দেয়ার দরকার নেই ডেঙ্গুর জন্য। রক্ত তখনই লাগে যখন রোগীর রক্তপাত হয়। সেখানে চিকিৎসক চাইলে রক্ত দিতে পারে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে খুব বেশি প্লাটিলেট প্রয়োজন হয় না। যারা মারা যায় তারা প্লাটিলেট কমের জন্য মারা যায় না। অনেক মারা যায় প্লাজমা লিকেজের ফলে। শরীর থেকে লিক্যুইড চলে যায়। যেমন প্রেসার কমে যায়, প্রস্রাব হয় না, কিডনি ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর শকে চলে যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গুর যে হিসাব দিচ্ছে তার বাইরেও হাজার হাজার ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। হিসাবের খাতায় তাদের নাম নেই। অনেক হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দিচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রস্তুতির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এজন্যই দিন দিন সারা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যথেষ্ট ঘাটতি থাকায় রোগীরা বেশি ঢাকামুখী হচ্ছেন। যা চিকিৎসকদের চাপ বাড়াচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, জ্যামিতিক হারে এডিস মশা বেড়ে গেছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর আমাদের জন্য বেশ শঙ্কার। এবার মৃত্যুতে এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের হার দেশের ইতিহাস ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে ডেঙ্গুর বিপজ্জনক বিস্তার ঘটেছে উল্লেখ করে সংক্রমণ রোধে হেলথ ইমারজেন্সি বা জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ। গত ৯ জুলাই জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ফয়জুল হাকিম সই করা এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
অপরদিকে দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১ হাজার ৭৫৭ জন।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোট আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৯২ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৬৫ জন ভর্তি হয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ২৬ হাজার জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৫৬৮ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ৪৫৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৪৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৩ হাজার ৪৫৪ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৮ হাজার ১৯ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫২ হাজার ১৫৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৮ হাজার ৬৫২ এবং ঢাকার বাইরে ২৩ হাজার ৫০২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।