বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা হামলা চালিয়ে চলমান আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। তাঁরা বলেছেন, অতীতের মতো হামলা করে মামলা দিয়ে এবারের আন্দোলন দমন করা যাবে না। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে রাজনৈতিক কৌশল বদলে রাজপথে মোকাবিলা করবেন। সরকারের পতন ঘটিয়েই ঘরে ফিরবেন তাঁরা।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। গত শনিবার ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা, নির্যাতন ও নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই জনসমাবেশের আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা বিএনপি।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে সভাপতিত্ব করছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। সমাবেশ সঞ্চালনা করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ।
সমাবেশ শুরুর পর বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ বহু নেতা–কর্মীর ওপর হামলা হয়েছে। কেবল কৃষক দলেরই শতাধিক নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘আওয়ামী লীগ পচে–গলে দেশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে’ মন্তব্য করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা বিএনপির নেতা–কর্মীদের হত্যা করে আন্দোলন দমিয়ে রাখতে চাইছে। কিন্তু সরকারের পতন ছাড়া আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’
বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি হারুন আল রশীদ বলেন, তারা ভেবেছে অত্যাচার করে, হামলা চালিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দেবে। কিন্তু হামলা করে জুলুম করে এই আন্দোলন থামানো যাবে না।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, শুক্রবার নয়াপল্টনের বড় সমাবেশ থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কর্মসূচিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নির্মমভাবে গুলি চালিয়েছে। ৪০ জন গুলিতে আহত হয়েছে। চিকিৎসারত অবস্থায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তাঁদের এই লড়াই দেশের নাগরিকদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উল্লেখ করে এস এম জিলানী বলেন, বিশ্ববাসী দেখেছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রয়োজনে রাজনৈতিক কৌশল বদল করে তাদের রাজপথে মোকাবিলা করা হবে।
সমাবেশে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, পুলিশ নির্বিচার গুলি চালিয়ে এবং গয়েশ্বর, আমানসহ অসংখ্য নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে মনে করেছে কর্মসূচি বানচাল করে দেবে।
পুলিশের যাঁরা দায়িত্বে, তাঁরা রাষ্ট্রের কর্মচারী, দলের কর্মী নয় উল্লেখ করে সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, ‘যাঁরা অতি উৎসাহী হয়ে হামলা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে।’
গত শনিবার সরকার ও সরকারের পেটোয়া বাহিনী যে নাটক করেছে, তা ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা। তিনি বলেন, ‘যেকোনো সময় ঢাকাসহ পুরো দেশ অবরোধ করা হবে। সরকারের পতন ঘটিয়েই ঘরে ফিরে যাব।’
বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক শরাফত আলী বলেন, তারা কাপুরুষের মতো দলের নেতা–কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। হামলা, গ্রেপ্তার করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সহসমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন চারদিকে কালো ধোঁয়া দেখছে।’
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে। নিজেরা বাস পুড়িয়ে বিরোধীদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অবহিত করেছি। তারপরও পুলিশ লীগ নির্বিচার হামলা করেছে, গ্রেপ্তার করেছে। যুবলীগ–ছাত্রলীগের অনেকে পুলিশের পোশাক পরে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’
এই সরকারের হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ নয় এবং আওয়ামী লীগের হাতে ভোট নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেন শহীদ উদ্দীন চৌধুরী। গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে খাওয়ানোর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা গ্রেপ্তার হয়েছি, আমাদের খাবার দেওয়া হয়নি। মানুষ জানে নতুন নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে।’
বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে রক্তপাত ঘটানো হয়েছে। হামলা করে মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। সরকারের পতনের আগে কেউ ঘরে ফিরে যাবে না।