তখন মেয়ের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল, তাই মাথা ঠিক ছিল না: হাবিবুর

তখন মেয়ের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল, তাই মাথা ঠিক ছিল না: হাবিবুর

ডেঙ্গু আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার আশায় হাসপাতালে গেছিলাম। সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে গিয়ে উল্টা দুর্ভোগ পোহাইলাম। হাজতবাস করলাম। সবার দোয়ায় আজ জামিন পাইছি। এখন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চাই,’ জামিন পেয়ে কথাগুলো বলছিলেন হাবিবুর রহমান।

ডেঙ্গু আক্রান্ত মেয়ে আদিবাকে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল বুধবার ভোরে ভর্তি করতে গিয়ে শয্যা নিয়ে বিতণ্ডার জেরে গ্রেপ্তার হন হাবিবুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক সেলিম খান।

আদালতের সব প্রক্রিয়া শেষে স্ত্রী সাথী আক্তারকে নিয়ে মুগদা থানা হয়ে বাসায় ফেরেন হাবিবুর। থানায় যাওয়ার পথে আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষকে আটক করে আদালতে আনা হয়েছে। সেখানে দাঁড়ানোরও জায়গা ছিল না। সারা দিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সারা শরীর ব্যথা হয়ে গেছে। অসুস্থ মেয়েটাকেও দেখতে পারেননি।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জীবনে কোনো দিন হাজতে ও আদালতে যাই নাই। আমার সে অভিজ্ঞতাও হইল।’

এর আগে সাথী আক্তার আজ সকালে অসুস্থ মেয়ে আদিবাকে নিয়েই মুগদা থানায় যান। থানা থেকে বলা হয়, আদালতে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। পরে মেয়েকে বাসায় পাঠিয়ে তিনি আদালতে যান। সাথী জানালেন, সকালেও মেয়েটার শরীরটা একটু গরম ছিল। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় নিয়ে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

সাথী বললেন, ‘সারা দিন তো আদালতেই ছিলাম, অসুস্থ মেয়েটার কাছে আর থাকতে পারলাম কই।’

মারধরের অভিযোগ এনে গতকাল হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বনি আমিন।

হাবিবুরের আইনজীবী মুরাদুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হাবিবুরের পক্ষে জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। অন্যদিকে মামলার বাদী চিকিৎসা কর্মকর্তা বনি আমিন আদালতে হাজির হয়ে লিখিতভাবে বলেন, হাবিবুরের জামিন হলে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।

গতকালের ঘটনা প্রসঙ্গে হাবিবুর দাবি করেন, ১০ টাকার টিকিট কেটে মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের কক্ষে যান। সেখানে গিয়ে কাউকে পাননি। পরে একজন জানালেন, চিকিৎসক ঘুমাচ্ছেন। ওই লোকই চিকিৎসককে ডেকে আনেন। ঘুম চোখেই চিকিৎসক আসেন। এক-দুই কথায় পরিস্থিতি খারাপ হয়। ওই চিকিৎসক তাঁকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। ওয়ার্ড বয় তাঁর স্ত্রীকে মারতে তেড়ে আসেন। তখন তিনি হাতের কাছে থাকা টুল নিয়ে ওই ওয়ার্ড বয়কে মারতে যান।

হাবিবুর বলেন, চিকিৎসকসহ অন্যরা দুর্ব্যবহার ব্যবহার করছেন, সেই প্রমাণ রাখতেই মুঠোফোনে ভিডিও শুরু করেন। পরে তা মুছে দিতে বাধ্য হন। একপর্যায়ে ওই চিকিৎসক তাঁর কক্ষের দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিলে তিনি দরজায় লাথি দেন।

অসুস্থ শিশু আদিবার বাবা বলেন, ‘আমি রাজধানীর একটি হাসপাতালে এসি মেরামতের কাজ করি। সে পরিচয়ও দিই। তারপরও আমার সঙ্গে চিকিৎসক ও অন্যরা এমন আচরণ করলেন।’

হাবিবুর বলেন, ‘বাসার কাছে বলে মুগদা হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসার জন্য গেছিলাম। তখন মেয়ের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। ওই অবস্থায় শুধু আমার কেন, যে কারও মাথা ঠিক থাকার কথা না। ওই চিকিৎসক আমাকে চটকানা মেরে তিনিও দোষ করেছেন। অথচ সব ক্ষতি আমারই হইল। জামিনের জন্য টাকা খরচ হইল। মামলার নিষ্পত্তি না হইলে আমিও তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) মেরামতের কাজ করেন হাবিবুর। মামলার জন্য যাতে তাঁর চাকরি না যায়, কর্তৃপক্ষ যাতে তাঁর বিষয়টি বিবেচনা করে, সে অনুরোধও জানান হাবিবুর রহমান।

এসব বিষয়ে জানতে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বনি আমিনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS