বিচারপতি অপসারণ নিয়ে আগামী রোববার (২০ অক্টোবর) পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ঘেরাও কর্মসূচিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে আলোচনার পর আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর) এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জানান, বিচারপতিদের পদত্যাগে আপনাদের যে দাবি, আসলে বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হলেন রাষ্ট্রপতি এবং পদত্যাগ বা অপসারণ সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয় উনি সেটা করেছেন। আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থ হলো, আগামী ২০ অক্টোবর যে কোর্ট খুলবে, তারা বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না। এই মামলার শুনানি আছে ২০ তারিখ। অ্যাটর্নি জেনারেল প্লেস করবেন বলে আশা করছি। এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো শুরু হবে। আর বিচারপতি অপসারণের সঙ্গে এককভাবে সুপ্রিম কোর্ট জড়িত না। রাষ্ট্রপতি, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাও জড়িত আছে। আপাতত ১২ জনকে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে শুনানির মাধ্যমে বাকিগুলো আপনাদের সামনে আসবে।
এরপর হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বিচারপতি অপসারণের সংশোধনী নিয়ে মামলাটি চলমান আছে। আগামী ২০ তারিখ ওই মামলায় যদি সমাধান চলে আসে, তাহলে বিচারপতি অপসারণের দায়িত্ব হচ্ছে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের। তাহলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিচারপতিদের পদত্যাগ করতে হবে। অপসারণ করা হবে। এখন রোববার বিকেল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। আমরা অবজার্ভ করব। তাদের অপসারণের জন্য আমাদের কী রায় আসে। তারপর হবে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ।
গত ১০ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডাকেই হাইকোর্টে জড়ো হন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তাদের দাবির প্রেক্ষাপটে ওইদিনই পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি।
এরপর মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবি করে হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।
দুপুরে মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট চত্বরে আসেন শিক্ষার্থীরা। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকে তারা হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সঙ্গে ছিলেন আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম। এতে যোগ দেয় জাতীয় নাগরিক কমিটিও।
এই কর্মসূচি চলার মধ্যে বেশ কয়েকজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন—বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন।
বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আলোচনার পর বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সামনে এসে ১২ বিচারপতি নিয়ে ঘোষণা দেন আজিজ আহমদ ভূঞা।
সেই ঘোষণায় বলা হয়, আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থ হলো, আগামী ২০ অক্টোবর যে কোর্ট খুলবে, তারা বিচার কাজে অংশ নিতে পারবেন না।