ভাইরাসজনিত জ্বর ডেঙ্গু; যা স্ত্রী এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে এ জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। তবে এবার একটু আগেই, মানে এপ্রিল-মে থেকেই এই জ্বরের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। তাই এখনই অভিভাবকদের সাবধান হওয়া জরুরি।
কেন শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে— এ প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েকটা কারণ আছে। যেমন- শিশুদের ত্বক নরম। মশা খুব সহজেই কামড়াতে পারে। বড়দের মতো মশার কামড় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে না শিশুরা। শিশুরা বলতে পারে না। শিশুরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন মশা কামড়াতে পারে।
এছাড়া আমাদের বাচ্চারা যখন দিনে ঘুমায় তখন আমরা মশারি টানাতে অভ্যস্ত না। এসব কারণে শিশুদের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি। তবে এখন দিন-রাত সবসময়ই কামড়ায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছি— বিশ্বব্যাপী আলোর দূষণ হচ্ছে, আলোর ব্যবহার বেড়েছে। রাতে এখন প্রচুর আলো ব্যবহার হয়। আলোর ব্যবহার ও আলোর দূষণের কারণে মশার চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে। এখন দিনে বা রাতে— সবসময়ই এডিস মশা কামড়ায়।
আরেকটা বিষয় হলো- আমরা একসময় বলতাম, পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা হয়। আসলে এই ব্যাপারটিও সত্যি না। পরিষ্কার পানিতেই শুধুমাত্র এডিস মশা হয় এমন না, যেকোনো পানিতেই এডিস মশা হয়। আমরা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেছি, আমরা দেখেছি যে সুয়ারেজের পানি, ড্রেনের পানি এমনকি নোনা পানিতেও এডিস মশা তার জীবনচক্র সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে। এডিস মশা যেকোনো পরিবেশে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে পারে।
তাই এই মৌসুমে জ্বর হলেই প্রথমে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। জ্বরের প্রথম দিনে এ পরীক্ষা করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। জ্বর হলে বাচ্চাকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। শিশুকে পর্যাপ্ত পানি, খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি পান করাতে হবে, যেন অন্তত ৬ বার করে প্রস্রাব করে।
জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ব্যথার ওষুধ দেওয়া যাবে না। কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে ডেঙ্গুর বিপদচিহ্নগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিপদচিহ্ন দেখলে শিশুকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। কারণ, এ সময় শিশুর শিরাপথে স্যালাইন লাগতে পারে।