শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনে ঘুরতে আসেন সরকারি চাকরিজীবী আওলাদ হোসেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে বৃষ্টির কারণে বের হওয়া যায়নি। আজকে (শুক্রবার) বের হলাম, কিন্তু কোথায় যাবেন বলেন? পঞ্চগড়ে শিশুদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার তেমন কোনো জায়গা নেই। রেলস্টেশন কিছুটা দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় এখানেই ঘুরতে এসেছি।’
শুধু আওলাদ হোসেন নন। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি ঘুরতে বের হওয়া শত শত মানুষ এবার ভিড় করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনে। গত বৃহস্পতিবার ঈদের দিন বিকেলে বৃষ্টি থাকায় শুক্রবার বিকেল থেকে রেলস্টেশন এলাকায় জনসমাগম বাড়তে থাকে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে ধীরে দর্শনার্থীদের আগমন অনেকটা ভিড়ে পরিণত হয়। ট্রেন আর প্ল্যাটফর্ম দেখার পাশাপাশি দর্শনার্থীরা রেলস্টেশনের দৃষ্টিনন্দন মূল ফটক, অ্যাপ্রোচ সড়ক আর কার পার্কিং এরিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে আসা বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে কেউ এসেছিলেন পরিবার–পরিজন নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মুঠোফোনে তুলছিলেন সেলফি। কেউবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছবি তুলে রাখছিলেন স্মৃতি জমাতে। সেই সঙ্গে রেলস্টেশন এলাকায় গড়ে ওঠা চটপটি, ফুচকাসহ নানা রকম ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে বসে খাচ্ছিলেন অনেকে।
পঞ্চগড় জেলা শহর বা এর আশপাশে মানুষের বিনোদনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার তেমন কোনো জায়গা নেই। তবে ঈদ কিংবা অন্য বিশেষ দিনগুলোতে পঞ্চগড় পৌরসভার তুলারডাঙ্গা এলাকায় করতোয়া নদীর পাড় এবং সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মীরগড় বিজিবি ক্যাম্প–সংলগ্ন করতোয়া নদীর পাড়ে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। এবারও ঈদে এসব স্থানে মানুষকে ঘুরতে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া জেলা শহরের উপকণ্ঠে তালামা এলাকায় বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা হিমালয় বিনোদন পার্কেও ঈদ উপলক্ষে মানুষ ঘুরতে গিয়েছেন। তবে সেখানে টাকার বিনিময়ে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। এতে দুই বছর আগে নতুন আঙ্গিকে নির্মাণ করা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা দর্শনার্থীদের কাছে আড্ডা জমানোর অন্যতম স্থান হয়ে উঠেছে। অন্য স্থানগুলোর তুলনায় এবার রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের ভিড় বেশি দেখা গেছে।
বন্ধুদের সঙ্গে রেলস্টেশনে ঘুরতে আসা জাহেদুল ইসলাম রাসেল নামের এক তরুণ বলেন, ‘রেলস্টেশনে ঘুরতে এসে এত মানুষ দেখে অবাক হয়েছি। তবে অনেক ভালো লাগছে। জায়গাটা খোলামেলা আর দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় এখানে সবাই ঘুরতে আসছেন। এটা দেখে মনে হচ্ছে, পঞ্চগড়ে একটা ভালো মানের পার্ক খুবই দরকার।’
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসা রশিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে মূলত ঘুরতে বের হয়েছি। এখানে ঘুরতে এসে বাচ্চাদের ট্রেন দেখাতে পারলাম। এ ছাড়া সবাই মিলে খোলামেলা পরিবেশে বসে নানা রকম খাবার খাওয়া যাচ্ছে। ঘোরাফেরার জন্য জায়গাটা অনেক সুন্দর।’
রেলস্টেশন এলাকায় চিকেন ফ্রাই, চটপটি আর চা বিক্রি করছিলেন মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আশা করেছিলাম ঈদের দিন ভিড় বেশি হবে। কিন্তু ওই দিন বিকেল থেকে বৃষ্টি ছিল। এ জন্য লোকজনের বেশি ভিড় হয়নি। তবে শুক্রবার বিকেলে মানুষ আসা শুরু করেছে। এখানে মানুষ ঘুরতে আসে, সেলফি তোলে আর সময় কাটায়। অনেক সময় যাত্রী আর যাত্রীদের লোকজনও আসে। এতে আমাদের বিক্রি ভালোই হচ্ছে।’
রেলস্টেশনে বেড়াতে আসা পঞ্চগড় জেলার শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের বিনোদন আর প্রতিভা বিকাশের জন্য পঞ্চগড়ে একটি শিশুপার্ক খুবই প্রয়োজন। মানুষ ঈদের সময় শিশুদের নিয়ে একটু ঘুরতে যাবে, তেমন ভালো জায়গা নেই। তারই প্রতিফলন রেলস্টেশনের এই ভিড়। স্টেশনটি দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় মানুষ পরিবার–পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে আসছেন।’