ফ্রান্সের ফুটবলে খেলার মাঠে হিজাব পরা নিষিদ্ধই থাকছে। এ বিষয়ে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের (এফএফএফ) দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত দ্য স্টেট কাউন্সিল। বৃহস্পতিবার এ রায় দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কাউন্সিল অব স্টেটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এফএফএফ কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা যথাযথ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
ফরাসি ফুটবল ফেডারেশন খেলার মাঠে হিজাবসহ অন্য যেকোনো ধর্মীয় প্রতীকের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। যা ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক ম্যাচ ও ফেডারেশন আয়োজিত খেলায় বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়।
এফএফএফের এ নিষেধাজ্ঞা ফিফার হিজাব-বিষয়ক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বৈশ্বিক ফুটবলের কর্তৃপক্ষ এক দশকের বেশি সময় আগে নারী ফুটবলারদের হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ফিফার আইনে না থাকলেও এফএফএফ আলাদাভাবে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে কি না, এ প্রশ্নে মামলা করে ফ্রান্সের নারী ফুটবলারদের একটি দল, যাদেরকে ‘দ্য হিজাবইউসেজ’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
এ মামলায় বাদীদের বিপক্ষে রায় দিতে গিয়ে স্টেট কাউন্সিল বলেছে, ক্রীড়া কর্তৃপক্ষগুলো ‘ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড়দের ওপর নিরপেক্ষ পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে পারবে, যাতে ম্যাচগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং সংঘর্ষ বা সংঘাতগুলো রোধ করা যায়। স্টেট কাউন্সিল এফএফএফ কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে সঠিক এবং যথাযথ বলে বিবেচনা করছে।’
সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালতের দেওয়া রায়কে এফএফএফ ‘প্রজাতন্ত্রী ও নাগরিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ’ বলে উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি ‘একে সব ধরনের বৈষম্য দূর করার এবং লৈঙ্গিক সমতাকে উৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি হিসেবেও দেখা হচ্ছে’ বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের ফুটবলের কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবীর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এর আগে বিচারকার্যের যুক্তিতর্ক পর্বে সরকারি রেপোটিয়র বলেছিলেন, ফুটবলে এখনই ধর্মীয় প্রতীকের উপস্থিতি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি খেলোয়াড়দের মাঠে প্রবেশের সময় বুকে ক্রুশ চিহ্ন আঁকার কথা উল্লেখ করেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়, ফেডারেশন চাইলে নিজেদের আয়োজনগুলোতে কাপড় পরা এবং কোনো কিছু ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। সঙ্গে এ–ও উল্লেখ করা হয়, ‘ফেডারেশনগুলোর তৈরি করা অংশগ্রহণের নিয়মাবলি খেলোয়াড়দের মত এবং বিশ্বাস প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করতে পারে, তবে এর ফলে সরকারি কার্যকলাপ সূচারুরূপে সম্পন্ন হওয়াটা নিশ্চিত হবে।’
এর আগে গত সপ্তাহের শুরুতে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরার্ড ডারমানিন আরটিএল রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি খেলাধুলায় হিজাব পরার বিরোধী। তিনি এ সময় বলেছেন, ‘আপনি যখন খেলবেন, তখন আপনি ধর্মীয় জামাকাপড় পরতে পারবেন না। আপনি ফুটবল খেলার সময় সামনেরজন কোন ধর্মের, তা জানার কোনো প্রয়োজন নেই।’
ফ্রান্সে গত বছর ডানপন্থী সিনেটররা খেলাধুলাবিষয়ক আইনে একটি সংশোধনী আনার চেষ্টা করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, খেলার মধ্যে হিজাব ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার আওতা আরও বাড়ানো। যদিও তাঁদের সে চেষ্টা বিফলে গিয়েছিল। তাঁরা সে সময় বলেছিলেন, খেলার মাঠে নিরেপক্ষতা বজায় রাখা জরুরি। পাশাপাশি হিজাব যাঁরা পরেন, তাঁদের জন্যও নিরাপত্তাঝুঁকি থেকে যায়। বেশ তর্কাতর্কির পর নিম্নকক্ষে এই সংশোধনী খারিজ হয়ে যায়।