রাজশাহী নগরের দরগাপাড়া এলাকার একটি জায়গায় কোরবানির পশুর চামড়া জড়ো করা হচ্ছে। সেখানে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এর মধ্যে মো. ফরহাদ নামে একজন বিক্রেতা একটি খাসির চামড়ার দাম মাত্র ৫০ টাকা চেয়েছেন। কিন্তু এত কম দাম দিতেও রাজি হননি মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী নাদিম মোস্তফা। এ সময় ষাটোর্ধ্ব মো. ফরহাদ প্রথম আলোকে জানান, তিনি যে খাসির চামড়া বিক্রি করতে এসেছেন, সেটি কিনেছেন ১৮ হাজার টাকায়।
রাজশাহী নগরের হোসনিগঞ্জ এলাকা থেকে আসা মো. ফরহাদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জানান, এর আগে তিনি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কেনা একটি ষাঁড়ের চামড়া বিক্রি করে পেয়েছেন ৫০০ টাকা। কিন্তু খাসির চামড়া মাত্র ৫০ টাকায়ও বিক্রি করতে পারেননি। তাই চামড়াটি কোনো মাদ্রাসায় দিয়ে দেবেন। ভাগ্যিস সাইকেলে করে চামড়া নিয়ে এসেছেন বলে পরিবহন খরচ হয়নি।
এদিকে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী নাদিম মোস্তফা জানান, তিনি ভয়ে ভয়ে অল্প করে গরুর চামড়া কিনছেন। কিন্তু খাসির চামড়া কিনছেন না। কারণ, খাসির চামড়া বিক্রি করা যায় না।
নগরের ওই এলাকায় কথা হয় কসাই কাওসার আলী ওরফে জুম্মনের সঙ্গে, যাঁর ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে চামড়া বেচাকেনায়। তিনি জানান, আজ থেকে ১০ বছর আগেও চামড়ার বাজার এমন ছিল না। তখন একটি বড় গরুর চামড়া পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠত। এখন সেই চামড়া কেনেন সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা দিয়ে। জুম্মন বলেন, কিছু দেশীয় চক্র অল্প দামে চামড়া কিনে বিদেশে বিক্রি করে। ওই সিন্ডিকেটই চামড়া বিক্রির সর্বোচ্চ সুফল পায়। সরকার কেন এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না, এটাই রহস্য।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাজশাহী নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন পাড়া–মহল্লা থেকে পশুর চামড়া প্রধান সড়কগুলোতে এনে রাখা হচ্ছে। স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া জড়ো করছেন। প্রতিটি গরুর চামড়া ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির চামড়া খুব অল্প ব্যবসায়ীই কিনছেন, তা-ও খুব কম দামে। সব চামড়া সন্ধ্যায় বা রাতে নাটোর কিংবা রাজশাহীর বেলপুকুর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যাওয়ার কথা।
নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে চামড়া নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আশরাফুল শেখ হামিদকে। তিনি চার-পাঁচ বছর ধরে কোরবানির মৌসুমে তাঁর এলাকার চামড়াগুলো কিনে নেন। এবার তিনি ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা দামে চামড়া কিনেছেন। এসব চামড়া তিনি নাটোরের চামড়াপট্টি অথবা রাজশাহীর বেলপুকুর এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবেন বলে জানান।
আশরাফুল শেখ হামিদ বলেন, বাজারে চামড়ার তৈরি জিনিসপত্রের দাম যত বেশি চড়া, চামড়ার দাম তত কম। ৫-৭ বছর আগেও ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনে তাঁরা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতেন। চামড়ার সেই সুদিন এখন আর নেই। চামড়া কিনতে হয় ভয়ে ভয়ে, যদি বিক্রি না করতে পারেন।
রাজশাহী নগরের মোহনপুর এলাকার জাহিদুল ইসলাম জানান, তাঁদের প্রায় ১ লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়ার দাম উঠেছে মাত্র ৪০০ টাকা। তাই তাঁরা তখনো চামড়াটি বিক্রি করেননি। ভাগের গরু, তাই কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে চামড়াটি মসজিদ কিংবা মাদ্রাসায় দিয়ে দেবেন।