ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল মো. হাসান আল মামুনের। আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ঝোঁক আরও বেড়ে যায়। ফুটবল ও ক্রিকেট দুটোই খেলতেন সমানতালে। খেলাধুলায় বেশি সময় দেওয়ার কারণে স্নাতকের সিজিপিএ কম আসে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয়ে ২.৬৭ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক পাস করেন।
এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধীন এমবিএতে। সেখানেও খেলাধুলায় বেশি সময় দেওয়ার কারণে সিজিপিএ আসে ২.৭৮। ২০২০ সালে আইবিএ থেকে এমবিএ পাস করার পর সরকারি চাকরির প্রস্তুতি শুরু করেন মো. হাসান আল মামুন।
সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সিজিপিএ কোনো বাধা নয়। তবে কম সিজিপিএ থাকাও কোনো ক্রেডিট নয়। সিজিপিএ যাতে বেশি আসে, সেদিকে সবারই জোর দেওয়া উচিত। কিন্তু কোনো কারণে সিজিপিএ কম এলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিলে সব ভালো চাকরির দরজা খোলা আছে।
মো. হাসান আল মামুন
মো. হাসান আল মামুনের ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি বা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করে মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়েন। এবার এডি পদে চূড়ান্ত ফলাফলে ৪৬তম হয়েছেন তিনি।
মো. হাসান আল মামুন বলেন, সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সিজিপিএ কোনো বাধা নয়। তবে কম সিজিপিএ থাকাও কোনো ক্রেডিট নয়। সিজিপিএ যাতে বেশি আসে, সেদিকে সবারই জোর দেওয়া উচিত। কিন্তু কোনো কারণে সিজিপিএ কম এলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিলে সব ভালো চাকরির দরজা খোলা আছে। তাই সিজিপিএ কম না বেশি তা না দেখে প্রস্তুতির দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে ভাইভা বোর্ডে সিজিপিএ নিয়ে মো. হাসান আল মামুনকে তেমন কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি। একাডেমিক বিষয় নিয়ে সাতটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচটির উত্তর দিতে পারেননি। উত্তর দিতে না পারায় ভাইভা বোর্ডকে সরি বলে স্বাভাবিক থেকে মৌখিক পরীক্ষার সময়টুকু পার করেন। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয় নিয়ে পাঁচ থেকে ছয়টি প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। এর সবগুলোর উত্তরই তিনি দিয়েছেন। আর লিখিত পরীক্ষাও খুব ভালো দিয়েছিলেন মামুন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে তিনটি ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ধাপগুলো হলো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। এই তিনটি ধাপের মধ্যে লিখিত অংশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান মো. হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষা প্রার্থীদের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে নিয়মিত পত্রিকা পড়ার বিকল্প নেই। পত্রিকা জ্ঞানের ভান্ডার। পত্রিকার প্রথম পাতা, সম্পাদকীয় পাতা ও অর্থনীতি পাতা নিয়মিত পড়া উচিত। এ ছাড়া প্রতিদিন পত্রিকা পড়লে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ে আপডেট থাকা যায়। ইংরেজি পত্রিকা নিয়মিত পড়লে ফোকাস রাইটিংয়ে অনেক কাজে আসে।
সহকারী পরিচালক পদে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম শেষে নতুন আরেকটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে এডি পদের জন্য যাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে মো. হাসান আল মামুন বলেন, গত পাঁচ বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করা উচিত আগে। প্রশ্ন যেহেতু ইংরেজিতে হয়, তাই ইংরেজির দক্ষতা বাড়াতে হবে। ইংরেজির সমস্যা কাটাতে ইংরেজি বই পড়া, পত্রিকা পড়া ও সিনেমা দেখা উচিত। গ্রামার দিয়ে ইংরেজি শেখার চেয়ে ইংরেজি পড়ার অভ্যাসের মাধ্যমে ইংরেজি শেখা ভালো।
মো. হাসান আল মামুন বলেন, লিখিত পরীক্ষায় গণিতে ভালো করার শর্টকাট কোনো সূত্র নেই। ভালোভাবে কনসেপ্ট বুঝতে হবে। এখন থেকে প্রিলির প্রস্তুতির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষারও প্রস্তুতি নিতে হবে। ঢালাওভাবে পড়াশোনা না করে কৌশলী হতে হবে।
ভাইভায় কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও ভাবা যাবে না যে চাকরিটা পাব না। কখনোই নার্ভাস হওয়া যাবে না। আমার ভাইভা ভালো না হওয়ার পরও চাকরি পেয়েছি, কারণ আমি ভাইভা বোর্ডে স্বাভাবিক ছিলাম।
মো. হাসান আল মামুন
মৌখিক পরীক্ষার সময় যতটা সম্ভব হাসি মুখে থাকার পরামর্শ দেন মো. হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘ভাইভায় কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও ভাবা যাবে না যে চাকরিটা পাব না। কখনোই নার্ভাস হওয়া যাবে না। আমার ভাইভা ভালো না হওয়ার পরও চাকরি পেয়েছি, কারণ আমি ভাইভা বোর্ডে স্বাভাবিক ছিলাম।’