শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকায় পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠছে। মাছ মরে যাওয়ার আতঙ্কে অনেকে পুকুরের মাছ ধরে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অতিরিক্ত গরমে অক্সিজেনের অভাবে কিছু এলাকার পুকুরে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র ও মাছের খামারিরা জানান, শরীয়তপুরে ২ হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ১৮২টি ছোট-বড় পুকুর রয়েছে। এসব পুকুর ছাড়াও ২৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমির ২২৫টি প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ করা হয়। ১ হাজার ২৭ হেক্টর জমিতে ৩৩৪টি ধান খেতে ও ৪ হেক্টর জমিতে ৩০টি গলদা চিংড়ির খামার রয়েছে। এসব পুকুর ও খামারে জেলায় বছরে চাষের মাছ উৎপাদিত হয় ২৮ হাজার ৫৪৩ মেট্রিক টন। জেলায় অন্তত ৪৭ হাজার মানুষ মাছ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা এ সময়ে মাছ মরে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে দাবদাহ দেখা দিয়েছে। দাবদাহের কারণে পুকুরের পানি গরম হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন পুকুরে অক্সিজেনের সংকট হয়েছে। পাশাপাশি কিছু পুকুরে তলানিতে অবশিষ্ট খাবার, মাছের বর্জ্য ও বিভিন্ন ধরনের ময়লা জমে গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে ওই সব গ্যাস ও অক্সিজেন-সংকটের কারণে পুকুর ও মাছের খামারে মাছ মরে ভেসে উঠছে।
নড়িয়ার ভোজেশ্বর এলাকার মাছের খামারি সুখরঞ্জন দাস সদর উপজেলার গঙ্গানগর এলাকায় ১২ একর জমির ওপরে মাছের খামার করেছেন। হঠাৎ গত শুক্রবার তার খামারের মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে। তিন-চার দিনে তার ওই খামারের ৫০ লাখ টাকার মাছ মরে ভেসে উঠেছে।
সুখরঞ্চন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা মাছের খামারের ব্যবসা শুরু করেছেন। এখন দুই ভাই তা দেখছি। গত ৩০ বছরে এমন বিপর্যয় কখনো চোখে পড়েনি। আমাদের মতো ছোট খামারিদের ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি সহজে পোষানো যায় না।’
শরীয়তপুরের বিঝারি ইউনিয়নের ভড্ডা গ্রামের নাজির হোসেন খান নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও ডামুড্যার বিভিন্ন এলাকায় জমি ভাড়া নিয়ে মাছের খামার করেছেন। বিভিন্ন খামারে মাছের মরা দেখে তিনি কয়েকটি খামারের মাছ ধরে কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন।
নাজির হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, যেসব পুকুরের তলানিতে উচ্ছিষ্ট খাবার, মাছের মল, বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা জমে পচে আছে সেখানে একধরনের গ্যাস তৈরি হয়েছে। ওই গ্যাসে মাছ মরে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে শরীয়তপুরে বিভিন্ন স্থানে পুকুর ও খামারে অন্তত ১২ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার মাছ মরে গেছে। অনেকে আতঙ্কে খামারের মাছ ধরে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ওই সব স্থানে পানি বৃদ্ধি করতে হবে। পানি ঘোলা থাকলে চুন প্রয়োগ করতে হবে। সেই সঙ্গে অক্সিজেন ট্যাবলেট ছাড়তে হবে। এখন বৃষ্টি হচ্ছে, আর দু-তিন দিন বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আমিনুল হক , শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা
সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকার দীপঙ্কর দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার দিন আগে হঠাৎ পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠছে। আমার অন্তত ১৫ লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। আমি এ ক্ষতি কীভাবে পোষাব!’
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাছ মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা বিভিন্ন পুকুর ও খামার পরিদর্শন করেছি। যেসব পুকুর, খামারে পানির গভীরতা কম এবং যেখানকার পানি ঘোলা অতিরিক্ত গরমে সেখানে অক্সিজেন ফল করেছে। এতে অক্সিজেনের অভাবে মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ওই সব স্থানে পানি বৃদ্ধি করতে হবে। পানি ঘোলা থাকলে চুন প্রয়োগ করতে হবে। সেই সঙ্গে অক্সিজেন ট্যাবলেট ছাড়তে হবে। এখন বৃষ্টি হচ্ছে, আর দু-তিন দিন বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’