বিএনপির সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু যা বলেছেন তা ‘কথার ছলে’ বলেছেন বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই বক্তব্যকে আসল কথা ভেবে বিএনপির নেতারা আশান্বিত হচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আপাতত এ ধরনের কোনো চিন্তা আওয়ামী লীগের নেই বলে এই নেতা জানিয়ে দেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
সমাবেশ শুরুর ঘণ্টা খানেক পর সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় হুড়োহুড়ি শুরু হলে অনেকে পড়ে আহত হন। কয়েকজনকে হাসপাতালেও নিতে দেখা যায়।
গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন।
আজকের অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল নালিশ করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আনবে। নালিশ করতে করতে বিএনপি এখন নিজেরাই ফাঁদে পড়েছে। তারা নালিশ করে নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে পেয়েছে ভিসা নীতি। নির্বাচনে যারা বিশৃঙ্খলা করবে, যারা সন্ত্রাস করবে, যারা নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনে বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে। তারা কারা? তারা হচ্ছে বিএনপি।
এই ভিসা নীতিতে আওয়ামী লীগের ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কে কার প্রয়োজনে কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না, এটা সেই দেশের ব্যাপার। আমরাও আমাদের দেশে কাকে ভিসা দেব, কাকে দেব না, এটা আমাদের ব্যাপার। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কী আছে?’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর আসবে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে। মরাকে জীবিত করার চেষ্টা করবেন না। আমরা মারিনি, আদালতের আদেশে মরে গেছে। আপনি কেন বারবার আওয়ামী লীগের নামে এ অপবাদ দেন ফখরুল সাহেব? আপনাকে আমি আবারও সতর্ক করে বলছি, আওয়ামী লীগ কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিষিদ্ধ করেনি, করেছে সর্বোচ্চ আদালত।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ।
বিকেল ৩টায় এই সমাবেশ শুরু হয়। চারটার একটু পর আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ৫ থেকে ৭ মিনিটের মতো তাদের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি চলে। একপর্যায়ে হাতাহাতিতে চলে যায়। এ সময় তারা মঞ্চের কাছে থাকা বাঁশ-কাঠ দিয়ে দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। তাদের হাতের ব্যানারের লাঠি দিয়ে তারা মারামারিতে জড়ায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সমাবেশে। হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অনেকেই পড়ে ব্যথা পেয়েছেন। এই পরিস্থিতি শান্ত হতেই ১৫-২০ মিনিট পর আবারও দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে নারী ও পুরুষ মিলে ২০ জনের বেশি নেতা কর্মী আহত হন।এরপর দলটির অনেক নেতা কর্মী চলে যান।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল বারেক বলেন, ‘কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের নেতৃত্বে স্বতঃফূর্তভাবে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে এসেছি। অতর্কিতভাবে কামরুল ইসলামের এপিএস ইকবালের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা হয়। চেয়ার ও সেখানে যে ব্যানারের লাঠিসোঁটা ছিল, সেগুলো দিয়ে আমাদের বেধড়ক মারধর করে। আমার কপালের একটা অংশ কেটে গেছে। এতে অনেক নেতা কর্মী আহত হয়েছেন। শাহীন আহমেদের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা হামলা করেছে।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এবং কেরানীগঞ্জ ও সাভারের একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ সংসদীয় আসনের সদস্য কামরুল ইসলাম। সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তখন স্টেজে ছিলাম, আমি জানি না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মুন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশের সঞ্চালনা করেন ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির।