আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের জন্য চলমান আন্দোলন এবং বর্তমানে বিদ্যুতের যে সমস্যা, সেটাকে ডাইভার্ট (ঘুরিয়ে দেওয়া) করার লক্ষ্যে এসব বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট, উত্তরণ প্রয়াসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। বিএনপিপন্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এরা (সরকার) একটা জিনিস খুব ভালো জানে, সেটা হচ্ছে ডাইভারশন (ভিন্ন দিকে নেওয়া)। যখন মানুষ বিদ্যুৎ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তখন আরেকটা ইস্যু তৈরি করে ফেলেছে। কীভাবে এটা ডাইভার্ট করা যায়। আপনারা সবাই খুব মেতে উঠলেন আমির হোসেন আমুর বক্তব্য নিয়ে। সবাই শুরু করলেন, বাবা কী জানি কী হয়ে যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু গত মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন জোটের এক জনসভায় বলেছিলেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেই প্রতিক্রিয়ার মুখে আমির হোসেন আমু তাঁর ওই বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন।
আমির হোসেন আমুর ওই বক্তব্য সম্পর্কে একজন সাংবাদিক বিএনপি মহাসচিবের মতামত জানতে চেয়েছিলেন, এ কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি (আমির হোসেন আমু) কে? ছোট করছি না, উনি তো আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক না। উনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, প্রেসিডিয়ামের সদস্যও না। তার পরে আবার যিনি স্পোকসম্যান (মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের), তিনি বললেন, না ওটা আমাদের বক্তব্য না। দেখা গেল বিকেলের দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, সংলাপের কোনো বিকল্প নাই।’
এসব পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একটাই উদ্দেশ্য, আপনাকে ডাইভার্ট করা। আপনার যে লক্ষ্য, একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না, তাকে ডাইভার্ট করা। আর বিদ্যুতের যে সমস্যা, সেটাকে ডাইভার্ট করা।’
দেশে বর্তমান বিদ্যুৎ–সংকটের জন্য সরকারের ‘লুটপাট’কে দায়ী করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। সংসদে কত চিৎকার, হাতিরঝিলে আতশবাজি ফোটাল যে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পন্ন হয়ে গেছে বাংলাদেশ। ১৬ হাজার মেগাওয়াট দরকার, সেখানে ২৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হয়ে গেছে। এখন নাকি তাদের বিদ্যুতের ফেরি করতে হবে। আর আজকে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।’
ফখরুল বলেন, ‘এই যে এত ব্যয় করলেন, তাহলে টাকাটা গেল কোথায়। আমরা যারা গ্রাহক, আমরা তো বিদ্যুতের দাম দিচ্ছি। বারবার বাড়াচ্ছেন, তা–ও দিচ্ছি। সেই টাকাগুলো গেল কোথায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১১ সালে যেদিন আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে, সেদিনই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে চিরস্থায়ীভাবে অনিশ্চয়তা এবং সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। আজকে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র আমাদের অস্থিতে–মজ্জায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা (আওয়ামী লীগ) অতীতে গণতন্ত্রের কথা বলেছে, তারাই আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে সবার আগে কেড়ে নিয়েছে। আসলে আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র কখনো একসঙ্গে যায় না। তার যে রাজনৈতিক চরিত্র, বৈশিষ্ট্য—সেটা সম্পূর্ণভাবে ফ্যাসিবাদী। মারপিট ছাড়া তারা কিছু বোঝে না।’
দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে চলমান আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যে যেখানে আছি, একটু সাহস করে দাঁড়াই। কোথায়, কেন জানি আমাদের সাহসের অভাব দেখা দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বলুন, গণতন্ত্রের কথা বলুন বা অধিকার আদায়ের কথা বলুন— এসব যদি প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাহলে সাহস সঞ্চয় করে দাঁড়াতে হবে সবাইকে।’
ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।
ইউট্যাবের মহাসচিব মোর্শেদ হাসান খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলামের পরিচালনায় ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট, উত্তরণ প্রয়াসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শামসুল আলম, তৌফিকুল ইসলাম ও খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম।