নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার বাসিন্দা মো. শাহিন সরকার (৩৮)। মাদক সেবনের পাশাপাশি এই ব্যবসায় জড়িয়ে একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন তিনি।
তবে এখন শাহিনের দাবি, তিনি এসব ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি এখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান। এ জন্য তিনি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে আবেদন করেন।
শাহিনের আবেদন পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে জেলা পুলিশ। ইতিবাচক তথ্য পেয়ে তাঁকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়তায় থানা-পুলিশকে নির্দেশনা দেন এসপি।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শাহিনের স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়তা করব। পাশাপাশি খেয়াল রাখব, তিনি যেন আবার মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়েন।’
শাহিনের পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লায়। তবে বাবার কর্মসূত্রে তাঁর (শাহিন) জন্ম ও বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জে। গত সপ্তাহে শাহিনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, তাঁরা ১০ ভাইবোন। তাঁর বাবা শামছুল হক সরকার নারায়ণগঞ্জের একটি টেক্সটাইল কারখানায় ছোটখাটো চাকরি করতেন। এই চাকরির জন্যই তাঁর বাবা ফতুল্লায় বাসা নিয়েছিলেন। ফতুল্লাতেই তাঁর (শাহিন) জন্ম হয়। তাঁর বাবা বেঁচে নেই। অভাবের কারণে শাহিনের তেমন পড়াশোনা করা হয়নি। ছোটবেলাতেই সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। গাড়িচালকের সহযোগী (হেলপার) হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করেন।
শাহিনের ভাষ্য, সে সময় অসৎসঙ্গে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। গাড়ি চালানো ছেড়ে দেন। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে একাধিকবার জেলও খাটেন তিনি।
শাহিন বলেন, একসময় তাঁর মনে হয়, এটা কোনো জীবন নয়। মাদকের প্রতি তাঁর ঘৃণা জন্মে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করার জন্য নিজের কাছে নিজে অঙ্গীকার করেন তিনি। মাদক সেবন ও ব্যবসা ছেড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ চেয়ে তিনি গত ১১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের এসপির কাছে একটি আবেদন করেন।
আবেদনে শাহিন লিখেছেন, তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। অনেক সময় মাদকের টাকা জোগাড় করতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি খারাপ আচরণ করতেন। একপর্যায়ে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। মাদকের টাকা জোগাড় করতে এ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি মাদক সেবনসহ অপরাধমূলক কাজ ছেড়েছেন। এখন তিনি ধর্ম পালন করছেন। তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে চান। এ ব্যাপারে তিনি এসপির সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, শাহিনের আবেদনটি পেয়ে তদন্ত করে দেখা হয়, তিনি আসলেই মাদক সেবন ও ব্যবসা ছেড়েছেন কি না। জেলা পুলিশের তদন্তের আলোকে শাহিনের আরজির বিষয়টি বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) জানিয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে শাহিনের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো আইন অনুযায়ী চলবে।
শাহিন বলেন, স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে এখন তিনি ভালো আছেন। এখন কেউ আর তাঁকে মাদকসেবী বা ব্যবসায়ী বলেন না। তিনি বাকি জীবন এভাবেই কাটাতে চান।
নারায়ণগঞ্জ জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (শাহিন) যদি সত্যি মাদক সেবন ও ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান, তাহলে তাঁকে সহায়তা করা উচিত। তবে তাঁর ওপর নজরদারিও রাখতে হবে।