News Headline :
ভারতকে জবাবদিহিতায় আনতে জুলাই ঐক্যের আল্টিমেটাম সাতরাস্তা-মহাখালী: উন্নয়নের যাঁতাকলে নাকাল নাগরিক জীবন রাজধানীতে ৩ জায়গায় বিস্ফোরণ, পুলিশ বলছে ‘পটকা’ শীর্ষ ধনী পরিবারের বউ হয়েও সাধারণ কেন ঈশিতা? এক পোস্টে মুকুট হারালেন মিস ফিনল্যান্ড, কী করেছিলেন? সবার ভালোবাসা জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি: শাবনূর সরকারের ‘সবুজ সংকেত’ না মেলায় হচ্ছে না বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সমস্যা কাটাতে তামিমের ‘ক্লাসে’ শান্ত, পেলেন কাঙ্ক্ষিত সমাধান মোস্তাফিজকে কেনা ‘বুদ্ধিদীপ্ত’, পাথিরানার ১৮ কোটি দেখে অবাক শ্রীকান্ত বিশ্বকাপের প্রাইজমানি বাড়ল ৫০ শতাংশ, অংশ নিলেই মিলবে ১২৮ কোটি টাকা!
সাতরাস্তা-মহাখালী: উন্নয়নের যাঁতাকলে নাকাল নাগরিক জীবন

সাতরাস্তা-মহাখালী: উন্নয়নের যাঁতাকলে নাকাল নাগরিক জীবন

ঢাকা মহানগরীর অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সাতরাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ। এই পথ ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন, যেখানে রয়েছে দেশের প্রথম সারির অসংখ্য শিল্প কারখানা, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর। 

বছর খানেক আগেও সিমেন্টের টাইলসে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত আর সবুজে ঘেরা এই সড়ক এখন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) চলমান উন্নয়নকাজের জেরে পরিণত হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগের এক প্রান্তরে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ ও নতুন ফুটপাত তৈরির কাজ চললেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিত কাজ ও অব্যবস্থাপনায় ধুলা-বালি আর ভাঙা ইটের স্তূপ; পথচারী ও যাত্রীদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো এলাকা ধুলোয় ধূসর। সড়কের উভয় পাশেই চলছে কাজ। এক পাশের রাস্তা পিচ ঢালাই হলেও ফুটপাতের কাজ বাকি। আরেক পাশে রাস্তা ও ফুটপাত দুটোই ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। আর এই অব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।

ফুটপাত নয়, যেন আবর্জনার স্তূপ:
সাতরাস্তা-মহাখালী রুটের উভয় দিকের ফুটপাত এখন হাঁটার অযোগ্য। কোথাও রাস্তার কাটা মাটি স্তূপ করে রাখা, কোথাও নির্মাণ সামগ্রী, বালি ও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। ফলে শত শত পথচারী একপ্রকার বাধ্য হয়েই মূল সড়কে নেমে আসছেন। এর ফলে একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি ঝুঁকি বাড়ছে দুর্ঘটনার।

এখানকার নিয়মিত যাতায়াতকারী ও নাখালপাড়ার বাসিন্দা জয়ন্ত কুমার দাস বাংলা নিউজকে জানান, বছরখানেক আগেই এই সড়কে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত তৈরি করা হয়েছিল। অথচ এখন অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে ফুটপাতে স্তূপ করে রাখায় কেউ ব্যবহার করতে পারছে না। এত ব্যস্ত সড়কে পথচারীরা রাস্তায় নামলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, নির্মাণ কাজের অব্যবস্থাপনার কারণে শীতকালে ধুলাবালিতে বায়ুদূষণ চরম আকার ধারণ করেছে।

শিল্প এলাকার ভোগান্তি:
সাত রাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত (এক পাশের সড়কে) রয়েছে এসেনশিয়াল ড্রাগস, বিজি প্রেস অফিস, স্কয়ার কোম্পানির ফেকট্রি, কোহিনূর কেমিক্যাল, বিওয়াইডি গাড়ির শোরুম, এসিআই মোটরস, টিপারা আয়রণ অ্যান্ড টিন ফ্যাক্টরি লি:, চ্যানেল আই অফিস, ইফাদ অটোর বাইক শোরুম, টিভিএস শোরুম। 

স্থানীয় বাসিন্দা, সড়কের কাজ করা নির্মান শ্রমিক ও ট্রাফিকে দায়িত্বে থাকাদের মাধ্যমে জানা যায়, এই অংশের রাস্তা যেটুকু কাটা ছিল তা ভরাট করে এক সপ্তাহের বেশি সময় হবে পিচ ঢালাই করা হয়। তবে ফুট পাতের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এই অংশের ফুটপাতগুলোতে রাস্তা কাটার পর যে অবশিষ্ট মাটি থাকে সেগুলো স্তুপ করে রাখা। এই ফুটপাতে অধিকাংশ জায়গায় মাটি ও ময়লার ভাগার থাকায় সেদিক দিয়ে মানুষ হাঁটার কোনো ব্যবস্থাই নেই। যে কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়েই পথচারীরা প্রধান সড়কে নামছে।

অন্যদিকে রাস্তার বিপরীত পাশে মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত (অন্য পাশের সড়ক) অংশে রয়েছে নাবিস্কো ফ্যাক্টরি, সাউদার্ণ পেট্রোল পাম্প, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের অফিস, সততা পেট্রল পাম্প, জনস্বাস্থ প্রকৌশল অধিদপ্তর, তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, হিরো বাইক শোরুম, বিএসটিআই অফিস, বিজি প্রেস অফিস, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বিটেক্স), ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস এবং ভূমি অফিস। 

এই অংশের রাস্তা ও ফুটপাত দুটোরই কাজ বাকি। মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে সাত রাস্তা পর্যন্ত পুরো রাস্তার ফুটপাতের পাশে প্রায় এক ফুট প্রস্ত করে কাটা। যদিও কিছু কিছু অংশে ইট ও বালি দিয়ে ভরাট করা। তবে চলাচলের মতন অবস্থা নেই। আর ফুটপাতে দাঁড়ানো বা হাঁটার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফুটপাত জুড়ে বালুর ঢিবি। কোথাও রাস্তা কাটার পর ভাঙা পিচের স্তুপ। 

বিশেষ করে নাবিস্কো, তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিস অফিস ও বিএসটিআই অফিসে সামনে থেকে ঢাকা পলিটেকনিক পর্যন্ত অংশের ফুটপাতের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই অংশে বর্তমানে খনন করা রাস্তা ভরাট ও ড্রেন তৈরির কাজ হচ্ছে। কিছু কিছু অংশে পুরোনো ফুটপাত ভাঙার কাজও চলছে।

সড়কে যানবাহনের চাপ স্বাভাবিকভাবেই বেশি। এর মধ্যে যখন পথচারীরা ফুটপাত ছেড়ে মূল রাস্তায় চলে আসেন, তখন পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। 

ট্রাফিক পুলিশ টিএসআই মামুনুল ইসলাম এই পরিস্থিতিকে ‘কষ্টকর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ফুটপাতের কাজ চলায় পথচারীরা রাস্তায় নেমে এলে যান চলাচল ব্যাহত হয়। একদিকে সরকারি কাজ চলছে, অন্যদিকে পথচারীরাও বাধ্য হয়ে সড়কে আসছেন। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন।

তিনি আরও বলেন, কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদাররা প্রায়ই মাটি ও ময়লা সরিয়ে না দেওয়ায় ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে সিটি কর্পোরেশনকে জানানো হয়।

কাজ চলছে, শেষ কবে?
দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলমান থাকলেও তা শেষ হওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত মিলছে না। মিস্ত্রি আল আমিন, যিনি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই রাস্তায় ড্রেনের কাজ করছেন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ থাকলেও লোকবলের অভাবে অগ্রগতি ধীর। 

মাটি ও আবর্জনা কেন সরানো হচ্ছে না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজ করছি, তাই এসব মাটি বা আবর্জনা ফেলার মতো জায়গা নেই। রাস্তায় ফেললে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে, তাই ফুটপাতের একপাশে ফেলে রাখা হচ্ছে। 

ফুটপাতের কাজ করার জন্য রাস্তায় প্রচণ্ড ধুলা তৈরি হয়, এই ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত পানি ছিটানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, আলাদা করা পানি ছিটানোর ব্যবস্তা দেখি নাই। তবে কাজ করার সময় আমরা মিস্ত্রিরা নিজেরাই আশেপাশে পানি দেই। 

রহস্যের আবরণে ঠিকাদার:
এতো বড় একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ চললেও, কাজের স্থানে কোথাও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম ও তথ্যাদি সম্বলিত কোনো সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। এতে কাজের মান বা সময়সীমা সম্পর্কে জানার কোনো সুযোগ নেই নাগরিকদের।

অবশ্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (এক্স এন জোন ৩) কর্মকর্তা নুরুল আলম জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম জনি এন্টারপ্রাইজ। তবে কাজ কবে শুরু হয়েছে এবং কবে শেষ হবে, সেই ফাইল দেখে পরে বলতে পারবেন। তিনি আরও জানান, মহাখালী থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত সড়কের যে অংশটুকু কাটা আছে, সেখানে ডিপিডিসি বৈদ্যুতিক লাইনের কাজ করছে। তারা ক্লিয়ারেন্স দিলেই সিটি কর্পোরেশন সেই অংশের কাজ সম্পন্ন করে দেবে।

সামগ্রিকভাবে, সাতরাস্তা-মহাখালী সড়কে চলমান উন্নয়ন কাজ একদিকে যেমন আশার সঞ্চার করছে, তেমনি অন্যদিকে নির্মাণ কাজের অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা এবং ধুলার কারণে জনস্বাস্থ্য ও নাগরিক জীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে। 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS