গাজীপুর জেলা কারাগারে ‘আয়নাবাজির’ ঘটনা ঘটেছে। বন বিভাগের মামলার আসামি মো. ছাত্তার মিয়ার (৪৫) জেল টাকার বিনিময়ে খাটছেন মো. সাইফুল ইসলাম (৩০) নামে এক যুবক।
সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ ও জেল কর্তৃপক্ষের আসামি যাচাইয়ের বিষয় নিয়েও।
বন বিভাগের মামলার মূল আসামি ছাত্তার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মোথাজুরী তালচালা এলাকার আলফাজ উদ্দিনের ছেলে। জেলে থাকা মো. সাইফুল ইসলাম একই এলাকার রহিম বাদশার ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া রেঞ্জ এলাকা থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বন থেকে সরকারি গাছ কাটার সময় হাতেনাতে কয়েকজনকে আটক করে বন কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় বন বিভাগ বাদি হয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পরে গত ৭ ডিসেম্বর ওই মামলার প্রধান আসামি ছাত্তার মিয়া পরিচয়ে আদালতে হাজিরা দেয় ভাড়াটে সাইফুল ইসলাম। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই সাত্তার মিয়ার পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল খাটছে ভাড়াটে আসামি সাইফুল ইসলাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ছাত্তার মিয়া মামলার ঝামেলা এড়াতে পরিচয় গোপন করে সাইফুলকে হাজতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তার লোকজন সাইফুলকে অর্থের লোভ দেখিয়ে তার নামে কাগজপত্র তৈরি করিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করান। পরে আদালতের আদেশে সাইফুলকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে ছাত্তার প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কালিয়াকৈর ফুলবাড়িয়া রেঞ্জের কাচিঘাটা বিট কর্মকর্তা শরিফ খান জানান, সরকারি গাছ কাটার অভিযোগে মালামাল জব্দ করে মামলা দায়ের করি। পরে পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে তাকে জেলে পাঠায়।
সাইফুলের পিতা রহিম বাদশা জানান, ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাত্তারের পরিবর্ত আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন সাইফুল। পরে তাকে সেখান থেকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে পুলিশ ও জেল কর্তৃপক্ষের আসামি যাচাইয়ের বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সমালোচনা চলছে। তারা বলছেন, আসামি কে, তার পরিচয় কি, মামলা হলে আসামির ছবি তুলে রাখা হয়। এ বিষয়গুলো কি পুলিশের নজরে ছিল না? তারা সঠিকভাবে কাজ করলে এমন প্রতারণা হতো না।
জেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধ নিয়েও সমালোচনা করেন স্থানীয়রা। তাদের ভাষ্য, জেল কর্তৃপক্ষ একজন আসামির কাগজপত্র ও ব্যক্তি সেই জন কিনা, সেটি যদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতো তাহলে কেউ অন্যের অপরাধের কারণে স্বেচ্ছায় এমন প্রতারণা করার সাহস হতো না। এ ক্ষেত্রে তারা পুলিশ ও জেল কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদেরের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আসামি এন্ট্রির সময় বন বিভাগের মামলায় ওই ব্যক্তি নিজের নাম ছাত্তার বলে উল্লেখ করেছিলেন। যে কারণে সন্দেহ করা হয়নি। প্রকৃত ঘটনাটি জানার পর বায়োমেট্রিক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হই কারাগারে বন্দি সাইফুল ইসলাম আসলে মূল আসামি নন। বিষয়টি সম্পর্কে আমরা আদালতকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি।