সুফল (টেকসই বন ও জীবিকা) প্রকল্পে সরকারি নির্দেশনা মতে বাগান তৈরি না করে বরাদ্দের দেড় কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বন অধিদপ্তরের একটি চক্রের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা গত এক বছর ধরে বন বিভাগে ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও তদন্ত করেনি বন বিভাগ। এই চক্রের মূলহোতা সাদেকুর রহমানকে বন বিভাগ শাস্তির বদলে সম্প্রতি ডেপুটি রেঞ্জার পদে পদোন্নতি দিয়েছে।
শুধু পদোন্নতি নয়, তাকে বন বিভাগের লোভনীয় পেস্টিং খ্যাত কক্সবাজার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বন অধিদপ্তরের এসব দুর্নীতি চিহ্নিত করে গত ২৫ নভেম্বর বাংলানিউজে “বন অধিদপ্তরে দুর্নীতি ‘ওপেন সিক্রেট’, শাস্তির বদলে পদোন্নতি” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বনায়নের নামে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের পাশাপাশি ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইউনিটের বিরুদ্ধে।
গত ২৬ নভেম্বর উপবন সংরক্ষক উম্মে হাবিবা চিঠি দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলামের কাছে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের কুমিরা রেঞ্জে ৭০ ও ১০ হেক্টরের দুটি বাগান সৃজনে ব্যর্থতায় জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায় দায়িত্ব নির্ধারণ পূর্বক দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট বন সংরক্ষকের মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্য তার দপ্তরে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। অথচ পত্র প্রাপ্তির ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম বন সংরক্ষকের দপ্তর থেকে উম্মে হাবিবার দপ্তরে চিঠি প্রেরণ করা হয়নি।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল উম্মে হাবিবা চিঠি দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, সুফল প্রকল্পে ২০২৩-২০২৪ আর্থিক সনে কুমিরা রেঞ্জের কুমিরা বিটে ১৭০ হেক্টর দ্রুত বর্ধনশীল বাগান প্রথম জরিপ হয় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। জরিপে ১৭০ হেক্টর বাগানে জীবিত চারাগাছের হার ৬০.২০ শতাংশ। যেখানে চারা থাকার কথা কমপক্ষে ৮০ শতাংশ। একই রেঞ্জের ১০ হেক্টরের অন্য একটি দ্রুত বর্ধনশীল বাগানে জীবিত চারার হার ৫০.৪০ শতাংশ। বাগানে জীবিত চারাগাছের হার সন্তোষজনক না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বাগানে চারাগাছের সংখ্যা শতভাগ নিশ্চিত করে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইউনিটকে জানানোর জন্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে জানানো হয়।
সূত্রমতে, চট্টগ্রাম অঞ্চল বন সংরক্ষক ড. মোল্যা রেজাউল করিমের আস্থাভাজন হিসেবে খ্যাত ডেপুটি রেঞ্জার সাদেকুর রহমানসহ বাগানের অর্থ আত্মসাতকারী কর্মকর্তারা। কুমিরা রেঞ্জে বাগান তৈরির নামে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সাদেকুর রহমান। উম্মে হাবিবা কৌশল করে নামের তালিকা বন সংরক্ষক ড. মোল্যা রেজাউল করিমের মাধ্যমে চেয়েছেন, যাতে অভিযুক্ত সাদেকুর রহমানসহ বাগান তৈরিতে ব্যর্থতায় দায়ী অন্য কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চট্টগ্রাম বন সংরক্ষকের কার্যালয়ে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে। এই চক্রটি পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইউনিটকে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করেছে— এমন প্রচারণা চালানোর খবর পাওয়া গেছে।
কুমিরা রেঞ্জে বনায়নের নামে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, ডেপুটি রেঞ্জার সাদেকুর রহমান, উপবন সংরক্ষক এস.এম কায়চার (ডিসিএফ) এবং সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদীন। বনায়নের এই হরিলুটের ঘটনা ধামাচাপা দিতে বরাদ্দের সব অর্থ উত্তোলনের পর এই তিন কর্মকর্তাকে বদলি করে প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম জানান, তিনি অভিযুক্তদের নামের তালিকা চট্টগ্রাম অঞ্চল বন সংরক্ষকের দপ্তরে পাঠিয়েছেন। যদিও মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত বন সংরক্ষকের দপ্তরে ওই চিঠি পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অন্যদিকে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইউনিটের উপবন সংরক্ষক উম্মে হাবিবা বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চল বন সংরক্ষক চিঠি আটকে রাখবেন এমন সুযোগ নেই। তিনি অভিযুক্তদের নামের তালিকা না পেলে পুনরায় চিঠি লিখবেন।
আপনি সরাসরি চট্টগ্রাম উত্তর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে অভিযুক্তদের নামের তালিকা না চেয়ে বন সংরক্ষকের মাধ্যমে কেন চাইলেন। এতে কি অভিযুক্তদের নামের তালিকা ফাইলবন্দি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে উম্মে হাবিবা বলেন, নামের তালিকা দিতেই হবে। এটি লুকানোর সুযোগ নেই।
আপনাকে অভিযুক্তরা ম্যানেজ করেছে— এমন প্রচারণা বন বিভাগে চাউর হয়েছে। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে উম্মে হাবিবা বলেন, আমাকে ম্যানেজ করার সুযোগ নেই। এমন অভিযোগ সঠিক নয়।