জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়টি অধরাই থেকে যাচ্ছে। কেননা, কমিশনের আলোচনায় বিষয়টি নাকচ হয়ে গেছে। সংস্থাটি মনে করছে কাউকে দায়িত্বে রেখে অন্যদের বাইরে রাখলে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নির্বাচন কমিশন কেবল পলিসি নির্ধারণ করে থাকে। বাস্তবায়নের প্রায় পুরো দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকে তাদের। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও সুপারিশ আসতে হয় রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমেই। ফলে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের ওই পদটিতে নিয়োগ করে নির্বাচনকে সরকারের হাত থেকে মুক্ত করার যে দাবি তা আর বাস্তবায়ন সেই অর্থে হচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন সার্ভিস গঠনের অধ্যাদেশ জারি করলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ইসি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ভবিষ্যতে ইসি কর্মকর্তাদের ভেতর থেকেই নিয়োগ দিতে আর কোনো বাধা থাকবে না। তবে সার্ভিস কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত ইসিকে হয়তো প্রশাসন ক্যাডারের ওপরেই ভরসা রাখতে হবে।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল। এদের মধ্যে দু’জন বিভাগীয় কমিশনার। আর বাকি ৬৪ জন ছিলেন জেলা প্রশাসক। ভোটে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল ৫৯২ জন। এক্ষেত্রে ৪৯৫ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ১৪ জন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন ৮ জন, জোনাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১১ জন ছিলেন। আর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন ৫৬ জন। এছাড়া কাস্টমস এক্সিকিউটিভ অফিসার ৫ জন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন দুইজন এবং সার্কেল অফিসার একজন নিয়োগ করা হয়েছিল। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের গতবারের মতো এবারও রিটার্নিং কর্মকর্তার সহায়ক হিসেবে নিয়োগ করা হতে পারে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা মহল থেকে ইসি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জোর দাবি উঠেছে। নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকেও এই দাবি তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বড় জেলায় যেখানে বেশি আসন আছে, সেখানে একাধিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এখন ইসির কর্মকর্তারা অনেক অভিজ্ঞ হয়েছে। অন্তত ১৪–১৫ জনকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা কারা হবেন, এটা নিয়ে কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। তবে সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এ বিষয়ে বলেন, তফসিল নিয়ে আমরা শিগগিরই বৈঠকে বসছি। সেখানেই চূড়ান্ত হবে কারা রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন। বিভিন্ন মহল এবং আমাদের কর্মকর্তাদের ভেতর থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি উঠেছিল। এ নিয়ে আমরা আলোচনাও করেছি। বলা হচ্ছিল যে অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার জন্য। আমরা আলোচনা করে দেখলাম, কারা অভিজ্ঞ সে বিষয়টি নির্ধারণ করতে গেলে আমাদের কর্মকর্তাদের মধ্যেই একটি বিভাজন তৈরি হতে পারে। একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই বাস্তবতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারির ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করতে চায় ইসি। এজন্য আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করার কথা ভাবছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কাজ। ভোটার তালিকার কাজও শেষ। নির্বাচনী আচরণ সংশোধন হয়ে গেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অধিকতর সংশোধনের কাজও চলছে। অন্যদিকে ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য মুদ্রণের কাজে বিজি প্রেসকে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন নির্বাচন উপকরণ কেনাও শেষ করেছে ইসি। শেষ হয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের কাজ।
নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটার ধরা হয়েছে বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এদের মধ্যে এক হাজার ২৩৪ জন হিজড়া ভোটারও রয়েছেন। পুরুষ ভোটার দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন। আর নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন। তবে এই সংখ্যা কিছুটা বাড়তে-কমতে পারে। এবার দেশের ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯। এছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি।