সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জাসদের ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না, তাহলে সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু ন্যায়বিচারও সম্ভব না। সংস্কার ছাড়াই ট্রাইব্যুনাল করলেন কেন? বিচার ব্যবস্থার ভেতরেও তো রোগ রয়ে গেছে। তাহলে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না। আর এই সরকার যদি দলীয় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন এই সরকারের অধীনে সম্ভব নয়।
এ সময় দেড় বছর পার হলেও এক ইঞ্চিও বৈষম্য দূর হয়নি বলেও মন্তব্য করেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের কাজে যদি কোনো অবহেলা, ঐক্যে কোনো দুর্বলতা দেখা দেয়, আমরা প্রকারান্তরে জামায়াতে ইসলামকে সুযোগ করে দেব এই খালি মাঠ পূরণ করার জন্য। সুতরাং এই হলো আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সমালোচনা আছে, কিন্তু জামায়াতে ইসলামের ব্যাপারে বলছি-তাদের তো বাংলাদেশের মাটিতে অফিস করার বা তৎপরতা চালানোর কোনো অধিকার নেই। কিন্তু সে জোর এখানে থাকছে কেন? এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্রের জাল। তারা বলে, সংস্কার চাই, পরিবর্তন চাই, আর আগে আগে গণভোট দিতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, দেশ এখন জটিল পরিস্থিতির মধ্যে আছে। ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মানুষ মুক্তি চেয়েছিল। একটা অরাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী অভ্যুত্থান হয়েছে। আমরা নৈতিকভাবে সমর্থন করেছি। কিন্তু তারপরে যে চেহারা-সুরত আবির্ভূত হয়েছে, এক কথায় বলতে গেলে বিদেশি মনোনীত একটা সরকার হয়েছে। যদিও উনি (ইউনূস) নিজেকে হালাল করার জন্য বলেছেন যে ছাত্ররা তাকে নিয়োগ দিয়েছে। এই সরকারের কাছ থেকে আমরা এখন খুব বেশি কিছু আশা করি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা বটম লাইনে চলে গেছি। উনি যাতে একটা নির্বাচন দিয়ে চলে যান। তিনি শুরুতে বলেছিলেন, সবকিছু ঠিকঠাক করতে পাঁচ বছর লাগবে। জনগণের দাবির প্রেক্ষাপটে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দেবেন বলেছেন। তিনি এনসিপি, জামায়াত আর বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন, মাঝে মাঝে এটাকে হালাল করতে আমাদেরও ডাকেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারকে সমর্থন করতে জাতীয় ঐকমতের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছি। প্রত্যেকটি বৈঠকে, প্রত্যেকটি ইস্যুতে সরকারকে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যের আলোচনা শেষে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে যদি দেশের মানুষ মনে করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে-তারা ভুল করবে না। আলোচনায় যেসব বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্য হয়েছে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই সনদ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এখন দেখা গেল, যেগুলো ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ বাদ দিয়ে সনদ করা হচ্ছে-এটা প্রতারণা।
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, যদি এটা করতে চান, তাহলে তাকে জনতার মুখোমুখি হতে হবে। কাজেই সব বাদ দিয়ে নির্বাচনটা দিয়ে দেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে এক দুর্যোগের ঘনঘটা। এক গভীর সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ নিপতিত হচ্ছে। এক গভীর খাদের কিনারে এসে বাংলাদেশ উপনীত হয়েছে। এই জায়গা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে এখানে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো, ক্ষমতাপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলো বা স্বাধীনতাবিরোধী, উগ্র ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলো-কোনোটিই এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে পারবে না। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে এখানকার বাম, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক শক্তিকেই ঐক্যবদ্ধভাবে একটি পথ ও পন্থা উদ্ভাবন করতে হবে।
সভায় জাসদসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।