মনে হচ্ছিল আমাকে হত্যা করা হবে: কিম কার্দাশিয়ান

মনে হচ্ছিল আমাকে হত্যা করা হবে: কিম কার্দাশিয়ান

প্যারিসের এক বিলাসবহুল হোটেলে ২০১৬ সালে ডাকাতির শিকার হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের টিভি তারকা ও উদ্যোক্তা কিম কার্দাশিয়ান। সম্প্রতি তিনি সেই ঘটনার মামলায় প্যারিসের একটি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৩ মে) ডাকাতির শিকার হওয়া সেই রাতের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আদালতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন কিম।  

নয় বছর আগে ঘটে যাওয়া এই ডাকাতির ঘটনার মামলার শুনানিতে কিম মুখোমুখি হন অভিযুক্তদের। সে অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিম জানান, তিনি নিশ্চিত ছিলেন ডাকাতরা তাকে গুলি করে হত্যা করবে। এ সময়, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি জানান, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর প্যারিস ফ্যাশন উইকের সময় হোটেলে অবস্থান করছিলেন কিম। গভীর রাতে পুলিশের পোশাক পরা দুজন মুখোশধারী অস্ত্রধারী হঠাৎ তার কক্ষে প্রবেশ করে তাকে জিম্মি করে। এরপর কিমের মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়, বিছানার পাশ থেকে তুলে নেওয়া হয় ১ কোটি ডলার মূল্যের অলংকার। যেগুলোর মধ্যে ছিল বাগ্‌দানের হীরার আংটি। এরপর তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য কক্ষে।

কিম বলেন, তখন আমার মনে হয়েছিল, দৌড়ে পালাব কি না; কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না। আমি বুঝতে পারি, ওরা যা বলছে তাই করাটাই সবচেয়ে নিরাপদ।

তাকে বিছানায় ফেলে হাত বাঁধা হয় প্লাস্টিকের টাই দিয়ে। পরে পা বাঁধা হয়, কিমের পেছন থেকে বন্দুক ঠেকানো হয়। তিনি বলেন, ‘সেই মুহূর্তেই আমি বুঝতে পারি, এবার ওরা আমাকে গুলি করবে। ’ ওই সময় তিনি মনে মনে প্রার্থনা করেন, যেন তার বোন কোর্টনি তাকে মৃত অবস্থায় না দেখতে পান।

কিম জানান, ঘটনার সময় একজন তাকে টেনে নিয়ে যায়, এ সময় তার পরনে থাকা গাউন খুলে যায়। কিম বলেন, পোশাক খুলে যাওয়ার পর তিনি ভয় পাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, মনে হচ্ছিল ধর্ষণের শিকার হব, এরপর আমাকে হত্যা করা হবে।

আদালতে বিচারক যখন জানতে চান, তিনি কি মনে করেছিলেন তিনি মারা যাবেন? তখন কিম মৃদু স্বরে বলেন, আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করেছিলাম, আমি মরে যাচ্ছি।

মঙ্গলবারের শুনানিতে অভিযুক্তদের একজন, ৭১ বছর বয়সী অ্যাওমার আইত খেদাচে আদালতে কিমের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন। জবাবে কিম বলেন, ‘আমি আপনাকে ক্ষমা করেছি। ’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘কিন্তু এতে আমার ট্রমা কিংবা জীবনকে যেভাবে বদলে দিয়েছে, সেটা বদলায় না। ’

তবে অন্য অভিযুক্তদের উদ্দেশে কোনো মন্তব্য করেননি কিম। এমনকি তার সাবেক ড্রাইভার গ্যারি মাদার, যিনি তার অবস্থান ডাকাতদের জানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, তাকেও এড়িয়ে যান কিম।

অভিযুক্ত ইউনিস আব্বাসের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন কিম, যিনি ২০২১ সালে ‘আই হেল্ড আপ কিম কার্ডাশিয়ান’ নামে একটি স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন।  

কিম বলেন, ও শুধু এই ঘটনা ঘটায়নি, সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে বই লিখে টাকা আয় করছে- এটা আমাকে খুব আহত করেছে। তিনি আরও বলেন, আমার বাবার দেওয়া ঘড়ি, আমার স্মৃতি- এসব তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

শুনানিতে কিম জানান, ঘটনার পর তার জীবনে এক রকম ভীতি ঢুকে গেছে। তিনি বলেন, এখন রাতে আমি একাধিক নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া ঘুমাতে পারি না। ঘটনার পর আমার মনে হতো, আমি বাইরে বের হলে কেউ বুঝে যাবে, বাড়ি খালি আছে। তারপরই হয়তো আবার কিছু একটা ঘটবে।

কিম বলেন, এই মামলায় নিজে উপস্থিত থেকে সত্য বলা দায়িত্ব। আমি একজন ভুক্তভোগী, আমার সত্যটা বলার জায়গা এটাই। এটা আমার পরিণতি, আমি চেয়েছি এটাকে শেষ করতে। এটা খুব ভয়ের, জীবন বদলে দেওয়া অভিজ্ঞতা ছিল। আমি চাই না, আর কেউ কখনো এমন ঘটনার শিকার হোক।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS