শুটিংয়ে নেমেই আলোচনায় শীর্ষে এসেছে ঢাকাই সুপারস্টার শাকিব খানের ঈদুল আজহায় ছবি ‘প্রিয়তমা’। প্রথমদিনে এ ছবির একটি লুক প্রকাশ করে রীতিমত শোরগোল ফেলে দিয়েছেন এই নায়ক। শাকিবকে নিয়ে ‘প্রিয়তমা’ নির্মাণ করছেন হিমেল আশরাফ।
বুধবার রাতে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে এই নির্মাতা জানান, ঢাকার একাধিক লোকেশনে ৯দিন শুটিং করেছেন। হিমেল আশরাফের কথা, ডায়ালগ পার্টে অর্ধেক শুটিং সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ‘প্রিয়তমা’র শুটিং হবে সুনামগঞ্জে। সেখান থেকে পুরো টিম যাবে কক্সবাজার ও বান্দরবানে।
“আমাদের কর্মাশিয়াল ছবি বেশিরভাগই সেট বানিয়ে শুটিং করা হয়। কিন্তু ‘প্রিয়তমা’য় সব রিয়েল লোকেশনে শুটিং করছি। স্ক্রিনে দেখলে দর্শক বুঝতে পারবে।”
শাকিব খানকে নিয়ে ‘র লোকেশন’-এ শুটিং করা অনেক কঠিন উল্লেখ করে হিমেল বলেন, শাকিব ভাইয়ের মত সুপারস্টারকে নিয়ে আউটডোরে শুটিং করা অনেক চ্যালেঞ্জ। পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করেও সাধারণ মানুষ সরাতে হিমশিত খেয়েছে। ধকল সহ্য করলেও আমরা চমৎকারভাবে শুটিং করেছি।
‘শাকিব ভাই এই গরমের মধ্যে পুরান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যেখানে কখনও যাননি সেখানে সহযোগিতা করে কষ্ট করে শুটিং করে দিচ্ছেন। আমরা সারাদিন কষ্ট করছি। প্রতিদিনের শুটিং পরদিন এডিট পাচ্ছি। দিনশেষে যখন আমরা যখন এডিট ভার্সন দেখতে পাচ্ছি তখন কষ্টটা মনে থাকছে না।’
হিমেল জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি ‘প্রিয়তমা’র প্রি-প্রডাকশন করছিলেন। অনেকেই মনে করছেন ঈদে মুক্তি দিতে ‘প্রিয়তমা’র শুটিং তাড়াহুড়ো করে হচ্ছে। হিমেল শুনেই হেসে ওঠেন। বলেন, কই, হুট করে শুটিংয়ে নামিনি। কাজ শুরু করেছি ফেব্রুয়ারি থেকে। ঘোষণা দিয়ে শুটিংয়ে নেমেছি।
শুরু থেকে পেপার ওয়ার্ক প্ল্যান করে শুটিং করছি। এরমধ্যে আমি কক্সবাজার, সুনামগঞ্জসহ প্রতিটি লোকেশনে ঘুরে র্যাকি করেছি। শুটিংয়ের পাশাপাশি সিনেমার টেবিল ওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের টিমে ১০০ জনের বেশি সদস্য। আর্ট ডিরেক্টর, সেট ডিজাইনার, প্রপস ডিজাইনার থেকে সহকারীরা যে যার জায়গায় প্রত্যেকে বেস্ট। সবার আন্তরিকতা আছে বলে সঠিকভাবে শুটিং করতে পারছি। কোথাও কোনো কমতি থাকছে না।
“বেস্টদের থেকে বেস্টটা তুলে আনতে আমাদের খরচটা বেশি হচ্ছে। যে পরিকল্পনা নিয়ে শুটিং করছি এতে শাকিব ভাই নিজেও খুব খুশি আছেন। আমার ধারণা উনি অনেকদিন পর সবকিছু পারফেক্ট পাচ্ছেন। হয়তো ‘প্রিয়তমা’ মুক্তির সময় তিনি তার অভিজ্ঞতা সবাইকে শেয়ার করবেন।”
হিমেল আশরাফ মনে করেন, শাকিব খান যে মাপের অভিনেতা গেল কয়েক বছর তার সব সিনেমায় সেই অভিনয় ক্যারিশমা উঠে আসেনি। তিনি বলেন, হয়তো শাকিব খানকে সেভাবে কাজে লাগানো হয়নি! সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে হিমেল বলেন, খুনি শিকদার, সিটি টেরর, আমার স্বপ্ন তুমি, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায়সহ বহু ছবিতে শাকিব ভাইকে দুর্দান্ত ড্রামা পারফর্মেন্স দেখতাম। দর্শক এই অভিনয়গুলো এখনও মিস করে। বহুবছর আবার ‘প্রিয়তমা’য় শাকিবের সেই অভিনয় উঠে আসবে। কারণ এ ছবিতে তার অভিনয়ের সেই জায়গা আছে এবং তিনি সেটা দুর্দান্তভাবে করছেন।
‘প্রিয়তমা’ রোম্যান্টিক অ্যাকশন ধাঁচের ছবি। হিমেল জানান, এতে অ্যাকশন কোরিওগ্রাফার প্রত্যেকেই দেশের বাইরের। উন্নতমানের বিজিএম থাকবে, ছবির পোস্ট ভিএফএক্সসহ যাবতীয় প্রডাকশনের কাজে দেশের বাইরে হবে। হিমেল বলেন, দেশের বাইরের অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট কাজ করছে।
‘প্রিয়তমা’ নিয়ে দর্শকদের যে প্রত্যাশা সেটায় আসলে আমাদের কাছে মুগ্ধতার চেয়ে বেশি কিছু। ঈদে ‘প্রিয়তমা নিয়ে আসছি, যেটা ভালো সত্যিকার অর্থে ভালো ছবি। ঈদে আরও ছবি আসবে। এটা আসলে দৌড় প্রতিযোগিতায় জায়গা না বা চর দখলের জায়গা না। সবগুলো ছবি ভালো চলুক। যে ছবির ম্যারিট যত ভালো হবে, যেখানে ছবি দর্শকদের পূর্ণ আনন্দ বিনোদন দিয়ে প্রত্যাশা পূরণ করবে দর্শক সেই ছবি বেশি দেখবে এটাই স্বাভাবাবিক।
‘প্রিয়তমা’য় নতুন শাকিব খানের পাশাপাশি দর্শক একটি ভালো গল্প পাবে। পুরোটা সময় হাসি, কান্না, আনন্দ, শিষ তালি দিয়ে উপভোগ করতে পারবে।
শুটিংয়ের নায়ক শাকিব খানকে কেমন দেখছেন? হিমেলের উত্তর, উনি সিনেমা পাগল মানুষ। দিন বা রাত যখনই আলাপ হতো সিনেমা নিয়ে আলাপ হতো। উনি সবসময় কীভাবে আরও ভালো সিনেমা করতে পারবেন বা ভালো চরিত্র করতে পারবেন এসব নিয়ে সবসময় ভাবেন। শুটিংয়ে ওনার ডেডিকেশনটা আমাকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করছে। অনেকেই শুটিংয়ে এসে অন্য কাজে মনোযোগী থাকে, ফেসবুক বা ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত থাকে।
”কিন্তু শাকিব ভাইয়ের মধ্যে কখনই এগুলো দেখিনি। বরং আউটডোর, গরমে লুক সেট করার পরেও একদম পারফেক্ট না হওয়া পর্যন্ত উনি ধৈর্য্যশীল থাকেন।”
‘শাকিব খান বছরের পর বছর তার জায়গায় নাম্বার ওয়ান কারণ ওনার তৃপ্তি আজও মেটেনি। যে কোনো কাজে শীর্ষ হয়ে গেলে আমরা অনেকেই ভাবি হয়েই তো গেছে আমি তো নাম্বার ওয়ান তাহলে এতো খেটে লাভ কি? কিন্তু শাকিব ভাইয়ের মধ্যে আরও ভালো করার ভয়ঙ্কর ক্ষুধা লক্ষ্য করছি। আমার মনে হয়, এই ডেডিকেশন এবং পেশায় সততা আছে বলেই উনি আজও সবার শীর্ষে এবং আগামীতে এভাবেই তার জায়গায় অনড় থাকবেন।’