যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি খ্যাত চট্টগ্রামেও পালিত হচ্ছে পবিত্র ‘লায়লাতুল বরাত’ বা শবে বরাত।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে এশার নামাজে মসজিদগুলোতে মুসল্লির ঢল নামে।শিশু, কিশোরসহ নানা বয়সী মুসল্লি অংশ নেন জামাতে। এশার নামাজের পাশাপাশি শবে বরাতের নফল নামাজ আদায় করেন তারা।এরপর কোরআন ও হাদিসের আলোকে শবে বরাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব নিয়ে বয়ান করেন খতিব ও ইমামরা। দরুদ, জিকির, মিলাদ, কিয়াম শেষে মোনাজাতে অংশ নেন মুসল্লিরা। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, সূর্যাস্তের পর থেকেই মসজিদগুলো বর্ণিল বাতির ফোয়ারায় আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বড় বড় মসজিদগুলোর সামনে টুপি, আতর, তসবিহ, মেসওয়াক, ধর্মীয় বই, পাজামা, পাঞ্জাবি, হালুয়া-পরোটা, চা, হালিমের দোকান বসে যায়। কিছু কিছু মসজিদের সামনে ছিল সাহায্যপ্রার্থী গরিবদের সারি। অনেকে বাসা-বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হালুয়া, আটা রুটি বিতরণ করেন। এবার শবে বরাত শুক্রবার দিনগত রাতে হওয়ায় জুমার নামাজেও ছিল মুসল্লির উপচেপড়া ভিড়। বেশিরভাগ মসজিদে বেশি মুসল্লির জামাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তারপরও অনেক মুসল্লিকে সড়কে দাঁড়িয়ে জুমার জামাতে অংশ নিতে দেখা গেছে।
শুধু মসজিদ নয়, মা-বাবা, মুরুব্বি, ভাই-বোন যাদের কবরবাসী হয়েছেন তারা সকালেই কবরস্থানে ছুটে যান। নগরের চৈতন্যগলি বাইশ মহল্লা কবরস্থানে স্বজনরা আগাছা, ফুল গাছের ডালপালা পরিষ্কার করেন। কেউ কেউ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন।
বিকেল হতেই নফল রোজাদারদের জন্য ইফতারির পসরা সাজান অনেক হোটেল ও খাবারের দোকান। ইফতারের উপকরণ হিসেবে হালুয়া, ছোলা ভাজা, পেঁয়াজু, জিলাপি, বেগুনি, সমুচা, সিঙাড়া, হালিম, বিরিয়ানি, বোরহানি, মুড়ি বিক্রি হয়েছে বেশ।
মসজিদের পাশাপাশি চট্টগ্রামে প্রচুর পীর, আউলিয়ার দরবার, খানকাহ ও মাজার রয়েছে। এসব আধ্যাত্মিক কেন্দ্রেও ভক্ত আশেকদের উপস্থিতি ছিল বেশ।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে এশার নামাজ, মিলাদ ও মোনাজাত শেষে লালখান বাজারের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, সেই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে শবে বরাতের নামাজ পড়তে আসতাম। এখনো প্রতিবছর আসি। কিন্তু বাবা নেই। এখন বাবার দেখানো পথে এশার নামাজ জামাতে আদায় করে শবে বরাতের নফল নামাজ পড়ে বাবার কবর জেয়ারতে যাই। সঙ্গে নিয়ে যাই ছেলেকেও।
তিনি জানান, শবে বরাত হচ্ছে গুনাহ মাফ চাওয়ার রাত, ভাগ্যবণ্টনের রাত। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দিনে নফল রোজা রাখি, রাতে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, মিলাদ, মোনাজাত, তাহাজ্জুদ, সেহেরি এবং ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করি।