গোটা বৈশ্বিক মহলে ভারতীয় মিডিয়া প্রচার করে থাকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন নরেন্দ্র মোদীর বন্ধু। সেজন্য গত বছর অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর প্রচারের ক্ষেত্রে ভারতীয় মিডিয়ায় ট্রাম্পেরই গুনগান দেখা গেছে বেশি।
ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ভারত উল্লাসে ফেটে পড়েছিল। সেদেশের বিভিন্ন স্থানে রীতিমত উৎসব হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বন্ধুকে উচ্ছ্বসিত অভিবাদন জানাতে ও নতুন অংশীদারির অঙ্গীকার করতে এতটুকুও দেরি করেননি।
যদিও প্রেসিডেন্ট পদে ‘বন্ধু’র শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকায় মোদীর নাম না থাকায় এই উচ্ছ্বাস-উৎসব ফিকে হয়ে আসে। ট্রাম্পের বিজয়ের পর দিল্লিতে যে ধরনের উৎসাহ দেখা যাচ্ছিল এবং বিশেষ করে ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সমীকরণের যে নতুন সম্ভাবনায় বুক বাঁধছিল, তা এখন অনেকটাই স্তিমিত।
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের আগে ভারত যে আশায় বুক বেঁধেছিল তা কতটুকু বাস্তবে ফলবে, আর আশঙ্কার জায়গা কতখানি তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে বিবিসি বাংলা।
এতে বলা হয়েছে, আগামী দিনে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতার অলিন্দে আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মেঘ ক্রমশ ঘনিয়ে উঠেছে।
২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়েন, তার আগের কয়েক মাসে নরেন্দ্র মোদীই একমাত্র বিশ্বনেতা, যার সঙ্গে তিনি দু-দুটো প্রকাশ্য জনসভায় অংশ নেন।
২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে টেক্সাসের হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের হাত ধরে ‘আব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দিতেও দ্বিধা করেননি।
ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিদেশি কোনো নেতার হয়ে নির্বাচনি জয়ধ্বনি দিচ্ছেন, সেটাও ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা।
আর তার ঠিক মাসপাঁচেকের মধ্যেই গুজরাটের আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদী নিজের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকের সামনে সংবর্ধনা জানান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে।
এছাড়া আরও বহুবার নরেন্দ্র মোদীর বিখ্যাত ‘হাগ’ বা ‘আলিঙ্গন কূটনীতি’রও স্বাদ পেয়েছেন ট্রাম্প।
কিন্তু দুই নেতার মধ্যে তখন যে ধরনের প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা, বন্ধুত্ব ও মাখামাখি চোখে পড়ত – গত কয়েক মাসে কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। সেপ্টেম্বরে নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরেও দু-জনের দেখা হয়নি।
নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী তাকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু এরপর আর দু-জনের মধ্যে সরাসরি কথাবার্তা হয়েছে বলেও কোনো প্রমাণ নেই।
আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক জোট ‘কোয়াডে’র পরবর্তী সামিট বা শীর্ষ সম্মেলন এই বছরেই ভারতে হওয়ার কথা – কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে আসবেন কি না, সেটাও এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।
ঠিক কোন কোন কারণে ট্রাম্প ২.০ বা দ্বিতীয় ট্রাম্প জমানাকে ঘিরে ভারতে কিছুটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে – এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতের আশান্বিত হওয়ার কারণ আছে – এই প্রতিবেদনে সেটাই খতিয়ে দেখা হয়েছে।
ট্যারিফ যুদ্ধ? তেলে স্যাংশন?
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার প্রশাসন চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে ‘ট্যারিফ’ বা আমদানি শুল্ক বসানোর কথা বিবেচনা করছে।
‘ট্যারিফ’ আসলে তার অতি প্রিয় একটি বাণিজ্যিক হাতিয়ার।
আমেরিকায় বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের চাহিদা কমাতে এবং বিশ্বের অন্যান্য বাজারে মার্কিন পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে তিনি যে এই অস্ত্রটি প্রয়োগ করতে কোনো দ্বিধা করবেন না, সেই হুমকি তিনি বহুদিন ধরেই দিয়ে আসছেন।
আর এই ‘ট্যারিফ যুদ্ধে’ ভারতও প্রবলভাবেই তার নিশানায় আছে, যাদের তিনি একদা ‘ট্যারিফ কিং’ বা ‘শুল্ক বসানোর রাজা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তি ছিল, ভারতের মতো এত চড়া হারে আমদানি শুল্ক প্রায় কোনো দেশই বসায় না, অথচ তারা আশা করে ভারতে তৈরি জিনিসপত্র খুব কম ট্যারিফে আমেরিকার বাজারে বিক্রি করতে পারবে!
ভারতকে ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির (ট্রেড ডেফিজিট) সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে। আমেরিকা বিশ্বে ভারতের সব চেয়ে বড় বাজার, সেখানে চড়া হারে শুল্ক বসানো হলে সেই ঘাটতি যেমন বাড়বে, ভারতের প্রবৃদ্ধিও নিশ্চিতভাবেই ব্যহত হবে।
দিল্লিতে অর্থনীতির সুপরিচিত বিশ্লেষক ও লেখক স্বামীনাথন আইয়ারের কথায়, ‘এটা তো পরিষ্কার যে আমেরিকাকে গ্রেট বানানোই তার লক্ষ্য, ভারতকে নয়!’
‘কাজেই ভারত যদি তাদের নিজেদের চড়া শুল্ক না কমায়, আমেরিকায় বাজারেও ভারতের ওপর বিরাট ট্যারিফ বসানোটা একরকম অবধারিত। আমি নিশ্চিত ট্রাম্প এক্ষেত্রে অন্তত ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছেন না। ’
আইয়ারের আশঙ্কা, ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞাও আমেরিকার আমলে আরও কঠোর করা হবে।
‘এটাও ভারতের জন্য কোনো সুখবর নয়, কারণ গত কয়েক বছর ধরে ওই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে ভারত যেভাবে রাশিয়া ও ইরান থেকে শস্তায় তেল কিনে আসছে, সেটাও এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়বে’. বলছিলেন স্বামীনাথন আইয়ার।
ভিসা ছাঁটাই, ডিপোর্টেশন
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণাতেও বলেছিলেন, আমেরিকার কোম্পানিগুলো যাতে বিদেশ থেকে এনে কর্মী নিয়োগ না করে আমেরিকার বাসিন্দাদেরই চাকরি দেয় সেই লক্ষ্যে তিনি এইচ- ওয়ানবি ভিসার সংখ্যায় ব্যাপক ছাঁটাই করবেন।
এইচ-ওয়ানবি হলো এক বিশেষ ধরনের নন-ইমিগ্র্যান্ট মার্কিন ভিসা, যার আওতায় মার্কিন কোম্পানিগুলো আধুনিক বিশেষায়িত প্রযুক্তি বা তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে বিদেশি কর্মীদের সাময়িকভাবে নিয়োগ করতে পারে।
বিগত কয়েক দশকে লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিক এই ভিসার সুবাদেই আমেরিকায় প্রবেশের ছাড়পত্র পেয়েছেন। তাদের অনেকেই তথ্যপ্রযুক্তি, হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিকিওরিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) মতো বিভিন্ন খাতে আজ কর্মরত বা সুপ্রতিষ্ঠিত।
ট্রাম্প জমানায় শুধু এই ধরনের বিদেশি কর্মীদের সংখ্যাই কমানো হবে না, এইচ- ওয়ানবিতে আসা বাবা-মায়ের আমেরিকায় জন্মানো সন্তানও মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার হারাবে বলে প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার (২১শে জানুয়ারি) একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন।
এ ছাড়া প্রতি বছর যে হাজার হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে মার্কিন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে যান, তাদের ভিসার সংখ্যাও কমানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
সোজা কথায়, ভারতীয় নাগরিকরা যাতে আমেরিকায় পাড়ি দিতে নিরুৎসাহিত বোধ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে ইতিমধ্যেই মধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছে।
আইনি অস্বস্তির জায়গাগুলো
গত বছর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে নিউ ইয়র্কে একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে (গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নু) হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ভারতের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে চার্জ গঠন করা হয়, তা দিল্লি ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কে রীতিমতো অস্বস্তি ডেকে এনেছিল। মার্কিন আদালতে সেই মামলা এখনও চলছে।
আমেরিকায় ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুশান্ত সিং বলছেন, এই মামলার ব্যাপারে আমেরিকাকে যাবতীয় গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করছে তাদের ‘ফাইভ আইজ’ শরিক কানাডা। আর কানাডার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও এই মামলায় অভিযুক্ত করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
অধ্যাপক সিং বলছেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী ইকোসিস্টেমে অনেকেরই ধারণা ছিল ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে একটা ‘ডিল’ বা গোপন সমঝোতা সেরে ফেলবে এবং এই আইনি মামলা থেকে দিল্লিকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
‘কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখলাম, ট্রাম্প কিন্তু মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ করলেন হরমিত ধিলোঁকে, যিনি ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব। ভারতে কৃষক আন্দোলনের সময় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের নিন্দা করেছিলেন হরমিত ধিলোঁ। কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর খুন হওয়ার পর তিনি প্রকাশ্যেই মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। ’
‘নতুন পদে নিয়োগ পাওয়ার পর হরমিত ধিলোঁ তার এই কঠোর অবস্থান ত্যাগ করবেন বলে মনে হয় না’, বলছিলেন অধ্যাপক সুশান্ত সিং।
আমেরিকায় চলমান আর একটি যে মামলা নিয়ে ভারতে তুমুল আগ্রহ আছে, তা হলো ভারতীয় শিল্পপতি ও ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির মামলা। আদানিকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি বলেই গণ্য করা হয়।
ভারতের বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে লাগাতার আক্রমণ করে আসছেন, যার জবাব দিতে মুখ খুলতে হয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকেও।
এমনকি ‘মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ – আদানি বিতর্কের সূত্র ধরে বিজেপি প্রকাশ্যে এই ধরনের অভিযোগ করতেও পিছপা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী মোদীও বিজেপিকে এই অভিযোগ কখনও প্রত্যাহার করতে বলেননি, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিজেপির এই মন্তব্যর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নীরব থেকেছে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুশান্ত সিং বলছেন, ‘মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কিন্তু সে দেশের শাসক দলের কোনো বিভাগ নয়। বাইডেনই ক্ষমতায় থাকুন বা ট্রাম্প, এটি মূলত একটি আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কাজ করে আর এই মার্কিন আমলাদের স্মৃতিশক্তিও খুব প্রখর। ’
ফলে গৌতম আদানি ইস্যুতে ভারত তথা ভারতের শাসক দলের অবস্থানের জন্যও তাদের স্টেট ডিপার্টেমেন্টের বিরাগভাজন হতে হবে বলেই অধ্যাপক সিং-এর ধারণা।
বাংলাদেশ ইস্যু
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে যে প্রসঙ্গটি দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বার বার প্রকাশ্য বিরোধের কারণ হয়েছে – তা হলো বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনার আমলকে দিল্লি আগাগোড়া ‘স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল’ বাংলাদেশ বলে বর্ণনা করে এসেছে, যে মূল্যায়নের সঙ্গে আমেরিকা কখনওই একমত ছিল না।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবক্ষয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে – আর তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধ সামনেও এসেছে বহুবার।
গত আগস্টে ঢাকায় নাটকীয়ভাবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই বিরোধ তুঙ্গে পৌঁছেছিল যথারীতি।
তবে ভারত এখন আশা করছে, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার ‘অতি সক্রিয়তা’ অনেকটাই কমে আসবে। কারণ সুদূর দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট দেশে কী ঘটছে না ঘটছে তা নিয়ে নতুন প্রশাসন হয়তো তেমন মাথা ঘামাবে না।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার আগে দিল্লিতে বলেছিলেন, ‘এখন আমরা সবাই সম্ভবত এক নতুন যুগের সম্মুখীন হতে যাচ্ছি। আমেরিকা তার নিজের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে বিদেশনীতি তৈরি করবে এবার, গোটা বিশ্বের ভালোমন্দ নিয়ে অত মাথা ঘামাতে যাবে না ‘
ওয়াশিংটনে নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আর সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের সঙ্গে তার প্রথম বৈঠকেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন এস জয়শঙ্কর।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে। তবে এখানে তার বিস্তারিত প্রকাশ করাটা সমীচীন হবে না। ’
তবে বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম দিন থেকেই আবার ‘ভারতের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলতে শুরু করবে’ – এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই বলেই মনে করছেন জেএনইউ-তে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ।
তিনি বলেন, ‘কাল থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আর কোনও মতভেদ কিংবা দৃষ্টিভঙ্গীর ফারাক থাকবে না – আমার মনে হয় না ভারতও সেরকম কিছু আশা করছে বলে। তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যে নির্যাতনের প্রশ্নে ভারত গত বেশ কিছুদিন ধরে সরব, কিংবা বাংলাদেশের মাটিতে ইদানীং যে ধরনের ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ দিল্লিকে উদ্বিগ্ন রেখেছে – সেগুলোতে অন্তত ট্রাম্প প্রশাসন ইতিবাচক ভূমিকা নেবে বলে অবশ্যই আশা করা হচ্ছে। ’
বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ হলো, ‘আমেরিকার দাবি সবার আগে’ – ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতির সঙ্গে ভারত তাদের নিজস্ব স্বার্থ ও অগ্রাধিকারের ভারসাম্য রেখে যতটা চলতে পারবে – দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথও সেভাবেই নিরূপিত হবে।