দীর্ঘতম সৈকতে হাজারো মানুষ দেখলো বছরের শেষ সূর্যাস্ত

দীর্ঘতম সৈকতে হাজারো মানুষ দেখলো বছরের শেষ সূর্যাস্ত

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকতে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলটা ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে আলাদা। অগণিত মানুষ এ বিকেলের শেষটি অবলোকন করেছেন একসঙ্গে, দেখেছেন বছরের শেষ সূর্যাস্ত।

বিকেলে লাল সূর্য যখন ধীরে ধীরে সমুদ্রের বুকে অস্তমিত হচ্ছিল, তখন সবাই মেতে ওঠেন আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। হাত নেড়ে বিদায় জানান এ বছরের শেষ আলোকে। নানা আনন্দ-বেদনার গল্পগাঁথা নিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২৪। বলা চলে বছরটি আনন্দের চেয়ে বেদনাবিধুর হয়ে কেটেছে। যত পর্যটক মঙ্গলবার সাগর পাড়ে ছিলেন, হিসেব করেছেন বিদায়ী বছরের নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ৫টা ২৩ মিনিটে সাগর সীমানায় সূর্য ডুবছে। পর্যটকরা ব্যস্ত সে ছবি তুলতে। কেউ কেউ বালিয়াড়ির বুকে লিখছেন বিদায় ২০২৪, স্বাগত ২০২৫। সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এমন মোহনীয় ক্ষণের সাক্ষী হয় প্রতি বছরের শেষ দিন। এদিন অনেকে শেষ সূর্যাস্তের সময় নতুন বছরের রেজুলেশন ঠিক করেন। প্রত্যাশা করেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে কাটাতে পারার।

ঢাকা থেকে বছরের শেষদিনটি ঘুরে বেড়াতে কক্সবাজার এসেছেন রহিম ইকবাল। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছুটে আসা বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে। ভালো লেগেছে অনেক। সবার সঙ্গে ছবি তুললাম।

সাভার থেকে আগত পর্যটক আশরাফ মিয়া বলেন, ২০২৪ সালে অনেক কিছু পেয়েছি। আবার অনেক কিছু হারিয়েছি। নতুন বছর নতুন করে শুরু করতে চাই। আর আগামীতে সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ চাই।

কক্সবাজারে পুরানো বছরকে বিদায় আর নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-১৫) অধিনায়ক এইচএম সাজ্জাদ বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কয়েক স্তরের নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় চলছে তল্লাশি। আশা করি, পর্যটকরা নিরাপদে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে পারবেন।

এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই পর্যটকদের ভিড় শুরু হয় কক্সবাজারের লাবণী, কলাতলী, ইনানী ও হিমছড়ি পয়েন্টে। শেষ বিকেলে ভিড় চরমে পৌঁছায়। সৈকতের প্রতিটি প্রান্তে নানা বয়সী মানুষ ব্যস্ত ছিলেন প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করতে। কেউ কেউ বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে দলবদ্ধভাবে উপভোগ করছিলেন সময়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পর্যটকদের সুবিধার্থে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিচকর্মী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

বিচ কর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন বলেন, দুপুরের পর থেকে পর্যটক আসা শুরু করে। শেষ বিকেলে ভিড় জমে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বছরের শেষ দিনে পর্যটকদের এমন ভিড় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের জন্য আশার আলো। আমরা আশা করছি, আগামী দিনগুলোয় পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসবেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে উন্মুক্ত কোনো আয়োজন না থাকলেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পর্যটন সেল) তানভীর হোসেন বলেন, সমুদ্রসৈকত ও অন্যান্য এলাকায় ফানুস উড্ডয়ন নিষেধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে আমাদের বিচ কর্মীরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সক্রিয় রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS