বাংলাদেশি সন্দেহে ভারতজুড়ে হয়রানির শিকার পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা!

বাংলাদেশি সন্দেহে ভারতজুড়ে হয়রানির শিকার পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা!

অবৈধ বাংলাদেশি আটক করতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে গত কয়েকদিনে সব মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি বাঙালিকে শনাক্ত করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতে বাংলাদেশি সন্দেহে বিভিন্ন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।

এমন উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি।

অধীর চৌধুরী চিঠিতে লিখেছেন, মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদিয়া, পশ্চিম দিনাজপুর এবং ২৪ পরগনা জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক কাজের জন্য দিল্লি এবং অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে এসব রাজ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু সেই অভিযানের নামে দিল্লিসহ সেসব রাজ্যে থাকা পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী শিক্ষার্থী ও পরিবারগুলোকে হয়রানি করা হচ্ছে, যা একেবারেই কাম্য নয়।  

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের আবেদন জানান অধীর। তার অনুরোধ, বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করুক, সেটা করতেই পারে। তবে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের হয়রানি করা বন্ধ করা হোক। কারণ, তারা ভারতীয়।  

চিঠিতে অধীর আরও লিখেছেন, ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকেই বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি দেশের বৃহত্তম প্রদেশ ছিল। সেই সময় থেকেই বহু বাংলাভাষী মানুষ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছেন। এমনকি ১৯১১ সালে যখন ব্রিটিশরা ভারতের রাজধানীকে কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে, তখনও বিপুলসংখ্যক বাঙালি দিল্লিতে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাদের বংশধররা এখনও দিল্লিতেই রয়েছেন।

কংগ্রেস নেতার অভিযোগ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, রাঁচি, পাটনা, উত্তরপ্রদেশসহ আরও বেশ কিছু রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বাংলায় কথা বললে ভাবা হচ্ছে তারা বাংলাদেশি। তারপর তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইছে। এ ধরনের হয়রানি বন্ধ করা হোক।

উল্লেখ্য, দিল্লিতে সরকার চালাচ্ছে আম আদমি পার্টি। দিল্লি পুলিশ সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ১৫০০ জন এবং মুম্বাই, নাগপুর, গুজরাটসহ ৩০ জনের বেশি বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে।  

তদন্তে দেখা গেছে, তাদের বৈধ কোনো কাগজপত্র ছিল না। এছাড়া পুলিশ প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করে অধীর চৌধুরী বলেন, বাংলা ভাষা বাঙালিদের অধিকার। বাংলা ভাষা গর্বের ভাষা। তাই বাংলা ভাষাভাষীদের কোনোভাবেই হেনস্তা করা যাবে না। এই হেনস্তা বন্ধ করুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  

তবে অধীরের হঠাৎ চিঠি দেওয়াকে অনেকেই রাজনৈতিক ও হিন্দু ভোট পক্ষে টানার প্রয়াস হিসেবে দেখছেন। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৈরি হওয়া বিজেপিবিরোধী ইন্ডিয়া জোটে এখন বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বিরোধী জোট ইন্ডিয়া থেকে জাতীয় কংগ্রেসকে বাদ দেওয়ার পক্ষে দাবি জানিয়েছে দিল্লির আম আদমি পার্টি।

দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেসের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল যে জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন, তাকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বলে উল্লেখ করেছে কংগ্রেস।  

আর সেই আবহেই ইন্ডিয়া জোট থেকে কংগ্রেসকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলতে শুরু করেছে আম আদমি পার্টি। জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে এ নিয়ে আম আদমি পার্টি আলোচনা করতে আগ্রহী বলেও জানিয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে দিল্লির বর্তমান শাসক দল আম আদমি পার্টির ওপর বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে কিছুটা চাপ বাড়ালেন কংগ্রেসের অধীর।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লির বাঙালিদের মন পেতে জাতীয় কংগ্রেস এই পন্থা নিয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ৫ আগস্টের পর ভারতে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে সবকটি রাজনৈতিক দল তাদের ঘর গোছানো শুরু করেছে।

বিষয়টি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গে।  কারণ, এই দুই রাজ্যে যথাক্রমে ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোট আসতে চলেছে। বিজেপি যখন হিন্দু ভোট একত্রিত করতে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে জিকির তুলেছে, ঠিক তখন হিন্দু ভোট ধরে রাখতে সেই পথে পা বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে মমতা নমনীয় ভাব দেখালে হাতছাড়া হতে পারে হিন্দু ভোটের একাংশ। যে কারণে তাকে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে শান্তিবাহিনী পাঠানোর মতো মন্তব্য করতে হয়েছিল।

একইভাবে দিল্লির সরকার যখন বাঙালি তাড়ানোর অভিযানে নেমেছে, তখন ওই একই ইস্যু নিয়ে সেখানকার বাঙালিদের মন পেতে অধীরের নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস চিঠি দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

কারণ, পশ্চিমবঙ্গের বহু বাঙালি স্থায়ীভাবে বসবাস করেন দিল্লিতে। এছাড়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক তো আছেই। তার ওপর অধীর রঞ্জন চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের সাবেক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের লোকসভা আসনের সাবেক এমপি। ফলে তার দেওয়া মোদিকে চিঠি দিল্লির বাঙালির ভোটে একটা ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS