বরিশালসহ দক্ষিণের ছয় জেলায় নিয়মিত মাদক উদ্ধার ও কারবারি গ্রেপ্তার হচ্ছে। তবে, এলাকাভিত্তিক বিক্রি রোধ কিংবা তুলনামূলক কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে একজন ধরা পড়লে আরেকজন মাদক কারবার পরিচালনা করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু অভিযান নয় সামাজিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ সোচ্চার হলে মাদক বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে তারা সবার সহযোগিতা চান।
সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাদক কারবারি, পাচারকারী ও বহনকারীরা কৌশল পরিবর্তন করে কখনো নৌপথে, আবার কখনো সড়কপথে দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মাদক নিয়ে আসছে।
এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কিছু মাদক ধরা পড়লেও সিংহভাগই বরিশালসহ বিভাগের ছয় জেলার মাদক কারবারি ও সেবীদের হাতে চলে যাচ্ছে।
সবশেষ কয়েকটি অভিযানের সূত্র ধরে জানা গেছে, নৌরুটে মাদক পাচারের পরিচিত রুট ছিল ঢাকা-বরিশাল ও লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল রুট। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এই রুটে মাদকের বড় বড় চালানসহ কারবারি ও বহনকারীরা ধরা পড়ায় এখন সড়কপথই বেশি পরিচিত হয়ে উঠছে।
সূত্র বলছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। অল্প সময়ের মধ্যে যাওয়ার আসা করতে পারায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তাই সড়কপথে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যাও বেড়েছে।
এই সুযোগ নিচ্ছেন মাদক কারবারি ও পাচারকারীরা। তারা বাসের যাত্রী হয়ে নিরাপদে বরিশাল মহানগর, জেলাসহ পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনায় সহজেই মাদক পৌঁছে দিচ্ছেন পাচারকারীরা।
এক্ষেত্রে কখনও স্কুলব্যাগ ব্যবহার করে ছাত্রবেশে, আবার কখনো দামি লাগেজ ব্যবহার করে ভিআইপি যাত্রী বেশে মাদক পাচার করা হচ্ছে। অনেক সময় নবদম্পতিরও বেশ ধরেও মাদক বহন করছেন পাচারকারীরা। এ ছাড়া পিকআপ, ট্রাকসহ যানবাহনে আলাদা চেম্বার বানানোসহ বিভিন্ন কৌশলে মাদক পাচার হচ্ছে নিয়মিত।
বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার পরিদর্শক মো. সগীর হোসেন বলেন, বর্তমানে সড়কপথে মাদক পাচার বেশি হচ্ছে। কারণ হলো, প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যাত্রী সড়কপথে বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করেন। সবচেয়ে বেশি বাসে। এ সুযোগ নিয়ে বাসের যাত্রী হয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক নিয়ে আসেন।
ডিবির এই পরিদর্শক বলেন, প্রতিদিন অনেক বাস দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী নিয়ে এলেও প্রতিটি বাস তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। তবে গোয়েন্দা ও গোপন সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে বাস থামিয়ে অভিযান চালানো যায়।
আর এসব তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাত্র দুই-তিন দিনে ডিবি পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পৃথক অভিযানে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং প্রায় আধা মণ গাঁজা উদ্ধার হয়েছে।
বরিশাল মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তানভীর হোসেন খান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে মাদকের মধ্যে গাঁজার পাচার বেশি হয়। এর পরে রয়েছে ইয়াবা। সীমান্ত এলাকা থেকে এসব সড়ক ও নৌ-পথে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যায়।
তবে তার তথ্যানুযায়ী, আপাতদৃষ্টিতে সড়কপথে পাচার বেশি মনে হলেও নৌ-পথেও কম নয়। বরিশাল-ভোলা ও বরিশাল চাঁদপুর রুটের নৌযানেই বেশি ইয়াবা ও গাঁজা আসে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর লোকবলের অভাব এবং নৌ-পুলিশের দক্ষতার অভাবে এদের আটক করা যায় না।
তিনি মনে করেন, মানুষ এখন মাদকেই বিনোদন খোঁজে। তাই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
যদিও শুধু অভিযানে মাদক রোধ সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আলেয়া পারভীন বলেন, এর বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে সচেতনতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে। সেইসঙ্গে উন্নত দেশগুলোর মতো বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ব্যক্তি ও লাগেজ চেকের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করার সময় এখন এসেছে। পাশাপাশি দূরপাল্লার যানবাহনগুলোতে মাঝপথে যাত্রী পরিবহনও বন্ধ করতে হবে।