সুনামগঞ্জের ছাতকে অতিবৃষ্টির কারণে বাম্পার ফলন এবং হাওরে-হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। সকল বিল-হাওরে বোরো ধানের ফলন ভালো হওয়ায় উপজেলার সর্বত্রই কৃষকদের মুখে হাসি ঝরছে।
লতি মৌসুমে ছাতকে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এ পর্যন্ত বন্যা-বৃষ্টি না থাকায় বোরো ধান কাটা, মাড়াইয়ের সুবিধা পেয়েছেন তারা।
গত কয়েক বছর ধরে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আগাম জাতের বোরো ধান চাষাবাদ হওয়ায় ফলে কিছু-কিছু এলাকার পাকা ধান আগে-ভাগেই কাটা শুরু হয়।
ছাতক উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় ছোট-বড় মিলে ৬৩টি বিল ও হাওর রয়েছে।
চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উপসী জাতের ১২ হাজার ৭৩০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের দুই হাজার ২২ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
উপজেলার নাইন্দার হাওরসহ বেশ কয়েকটি হাওর ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান কাটার এ যেন এক মনোরম দৃশ্য। হাওরে
বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকরা। পাশপাশি কিষাণিরা ধান ঝাড়াই করে শুকিয়ে গোলায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হাওরে ধানের খলায় কাজ করছেন কৃষক-শ্রমিক, নারী ও শিশুরা। কোনো কোনো হাওরে ধান কাটা, মাড়াই চলছে মেশিনের মাধ্যমে। আবার কোনো এলাকায় শ্রমিকরা ধান কাটছে, মাড়াই-ঝাড়াই করছেন সনাতন পদ্ধতিতে।
ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন হাওয়ারের কৃষকরা।
কৃষক-শ্রমিকরা কেউ ক্ষেত থেকে ধান কেটে খলায় টানছে, কেউ রোদে ধান শুকানোর কাজ করছে, কেউ মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই এবং কেউ কেউ সনাতন পদ্ধতিতে ধান মাড়াই-ঝাড়াইর কাজে করছেন।
স্থানীয় একাধিক কৃষকরা জানান, বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ার আগে বা পর থেকে এখানে কোনো শিলাবৃষ্টি হয়নি। জলাবদ্ধতায় কিছু ফসলের ক্ষতি হলেও এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে।
নোয়ারাই ইউনিয়নের কৃষক মনির উদ্দিন জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় নাইন্দার হাওরের অনেক ফসল জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে গেছে। মির্জার খালে অপরিকল্পিত নির্মাণের ফলে জলাবদ্ধতায় হাওরের ফসল নষ্ট হয়েছে।
কালারুকা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সত্তার ও আব্দুল আউয়াল জানান, তাদের ৯ বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে।
তৈমুছ আলী, আরশ আলীসহ বেশ কয়েক জন কৃষক জানান, ছাতকে অতিবৃষ্টি বা খরায় এ মৌসুমে বোরো ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে স্বপ্নের সোনালী ফসল তারা যথাসময়ে গোলায় তুলতে পারবে বলে আশাবাদী।
কিছু-কিছু এলাকার পাকা ধান আগে-ভাগেই কাটা শুরু হয়।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খাঁন জানান, চলতি মৌসুমে ছাতকে বোরো ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। সপ্তাহ আগ থেকেই ধান কেটে নিতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখানে আগাম জাতের কিছু বোরো ধান কাটা শেষ হলেও বিল-হাওরে পুরোদমে ধান কাটা চলছে।এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে এখানের বোরো ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরের জামান চৌধুরী জানান, উপজেলার নাইন্দার হাওর, ফাটার হাওরসহ বড়-বড় হাওরগুলোর পাকা বোরো ধান প্রায় অর্ধেক কাটা সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের আগ থেকেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষকের মাঝে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ভর্তুকি মূল্যে ৪৩টি কম্বাইন হারভেস্টার (ধান কাটার মেশিন) দেওয়া হয়েছে।